আমাদের মুক্তিযুদ্ধ পঞ্চম শ্রেণীর বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়: ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ বাঙালি জাতির ইতিহাসে একটি অত্যন্ত গৌরবময় ঘটনা। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা লাভ করেছি আমাদের এই প্রিয় দেশ বাংলাদেশ। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশরা এই উপমহাদেশ ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়। এরপর সৃষ্টি হয় দুইটি স্বাধীন রাষ্ট্র- একটি ভারত এবং অন্যটি পাকিস্তান। পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান নিয়ে গঠিত হয় পাকিস্তান। পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্মের পর থেকেই পশ্চিম পাকিস্তানিরা পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের উপর শুরু করে অত্যাচার ও নিপীড়ন। বাঙালিরাও সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবাদ আন্দোলন শুরু করেন।
আমাদের মুক্তিযুদ্ধ পঞ্চম শ্রেণীর বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়:
অল্প কথায় উত্তর দাও :
১। এমন পাঁচটি ঘটনার কথা লেখ যা মুক্তিযুদ্ধ সংঘটনে ভূমিকা রেখেছিল।
উত্তর: মুক্তিযুদ্ধ সংঘটনে ভূমিকা রেখেছিল এমন পাঁচটি ঘটনা হলো-
১. ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন।
২. ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলন।
৩. ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান।
৪. ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয় লাভের পরও ক্ষমতা হস্তান্তর না করা।
৫. ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধুর দেওয়া ঐতিহাসিক ভাষণ।
প্রশ্ন ২। আজ থেকে কত বছর আগে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল?
উত্তর: আজ থেকে ৫৪ বছর আগে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল।
প্রশ্ন ৩। মুক্তিযোদ্ধাদের রাষ্ট্রীয় উপাধিগুলো কী কী?
উত্তর: মুক্তিযোদ্ধাদের রাষ্ট্রীয় উপাধিগুলো হলো- ১. বীরশ্রেষ্ঠ, ২. বীরউত্তম, ৩. বীরবিক্রম ও ৪. বীরপ্রতীক।
প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
প্রশ্ন ১। মুক্তিযুদ্ধে ভারত আমাদের কীভাবে সাহায্য করেছিল?
উত্তর: ভারত আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র। মুক্তিযুদ্ধের পুরো
সময়টায় ভারত আমাদের নানাভাবে সাহায্য করেছে। তারা আশ্রয়গ্রহণকারী বাঙালি শরণার্থীদের খাদ্য, বস্ত্র ও চিকিৎসাসেবা দিয়েছে। তারা মিত্রবাহিনী নামে একটি সহায়তাকারী বাহিনী গঠন করে। অপারেশন জ্যাকপটে এই বাহিনী বাংলাদেশের পক্ষে যুদ্ধ করে। মিত্রবাহিনীর প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার নেতৃত্বে ১৯৭১ সালের ২১শে নভেম্বর মিত্রবাহিনী ও মুক্তিবাহিনী মিলে গঠন করা হয় যৌথবাহিনী। ১৯৭১ সালের ৩রা ডিসেম্বর পাকিস্তান ভারত আক্রমণ করে। এর ফলে যৌথবাহিনী একযোগে স্থল, নৌ ও আকাশপথে পাল্টা – আক্রমণ করে। তীব্র আক্রমণের ফলে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। মাত্র ৯ মাসের যুদ্ধে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করি। প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের এ অবদান আমরা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করব।
প্রশ্ন ২। বুদ্ধিজীবীদের কারা হত্যা করেছিল?
উত্তর: বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডে মূলত পাকিস্তানি সেনাবাহিনী অংশ নিয়েছিল। তাদেরকে সহায়তা করেছিল শান্তি কমিটি, রাজাকার, আলবদর, আলশামস নামে বিভিন্ন কমিটি ও সংগঠন।
মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে ডিসেম্বর মাসে পরাজয় নিশ্চিত জেনে পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসররা এদেশকে মেধাশূন্য করার পরিকল্পনা করে। এরই অংশ হিসেবে ১০ই ডিসেম্বর থেকে ১৪ই ডিসেম্বরের মধ্যে তারা আমাদের অনেক গুণী শিক্ষক, শিল্পী, সাংবাদিক, চিকিৎসক এবং কবি-সাহিত্যিক তথা বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে।
বুদ্ধিজীবী হত্যার ফলে আমরা দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হারাই। আমরা শহিদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে প্রতিবছর ১৪ই ডিসেম্বর শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করি।
প্রশ্ন ৩। আমরা এখন কীভাবে আমাদের স্বাধীনতা দিবস উদ্যাপন করি?
উত্তর: ২৬শে মার্চ আমাদের স্বাধীনতা দিবস। এ দিনটিকে আমরা জাতীয়ভাবে উদ্যাপন করি। ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিনটি শুরু হয়। এরপর ঢাকার সাভারে অবস্থিত জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও অন্যান্য সংগঠনসহ সর্বস্তরের জনগণ স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এভাবে সারাদেশেই শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। জাতীয়ভাবে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা কুচকাওয়াজ ও শারীরিক কসরত প্রদর্শন করে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিশু-কিশোরদের সমাবেশ করা হয়। রাজধানী ও দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে আলোকসজ্জা করা হয়। রেডিও-টেলিভিশনসহ গণমাধ্যম বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করে। পত্রিকাগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করে। এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও দোয়ার আয়োজন করে যথাযোগ্য মযাদায় স্বাধীনতা দিবস উদ্যাপন করা হয়।
অতিরিক্ত প্রশ্ন ও উত্তর:
১. সংক্ষেপে নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
প্রশ্ন ১। বাংলাদেশের প্রথম সরকারের নাম কী?
উত্তর: বাংলাদেশের প্রথম সরকারের নাম মুজিবনগর সরকার।
প্রশ্ন ২। ‘অপারেশন জ্যাকপট’ কী?
উত্তর: মুক্তিযুদ্ধে মিত্রবাহিনী কর্তৃক পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ওপর পরিচালিত আক্রমণ কৌশল ‘অপারেশন জ্যাকপট’ নামে পরিচিত।
প্রশ্ন ৩। মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশকে কতটি সেক্টরে ভাগ করা হয়েছিল?
উত্তর: মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশকে ১১টি সেক্টরে ভাগ করা হয়েছিল।
প্রশ্ন ৪। শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস কবে পালন করা হয়?
উত্তর: শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস ১৪ই ডিসেম্বর পালন করা হয়।
প্রশ্ন ৫। বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস কোন তারিখে?
উত্তর: বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস ২৬শে মার্চ।
প্রশ্ন ৬। বাংলাদেশের বিজয় দিবস কবে?
উত্তর: বাংলাদেশের বিজয় দিবস ১৬ই ডিসেম্বর।
প্রশ্ন ৭। মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি কে ছিলেন?
উত্তর: মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি ছিলেন জেনারেল মুহাম্মদ আতাউল গণি ওসমানী।
প্রশ্ন ৮। মুক্তিযুদ্ধে ‘ইন্টেলিজেন্স গ্রুপের’ জন্য নির্দেশনা কী ছিল?
উত্তর: মুক্তিযুদ্ধে ‘ইন্টেলিজেন্স গ্রুপের’ জন্য নির্দেশনা ছিল শত্রুপক্ষের গতিবিধি সম্পর্কে খবরাখবর সংগ্রহ করা।
প্রশ্ন ৯। মুজিবনগর সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন কে?
উত্তর: মুজিবনগর সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন উপ-রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম।
প্রশ্ন ১০। বাঙালি জাতির ইতিহাসের একটি গৌরবময় ঘটনার নাম লেখ।
উত্তর: ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ বাঙালি জাতির ইতিহাসের একটি গৌরবময় ঘটনা।
প্রশ্ন ১১। বঙ্গবন্ধু কত তারিখে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন?
উত্তর: বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালের ১০ই জানুয়ারি স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন।
প্রশ্ন ১২। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রিয় স্লোগান কী ছিল?
উত্তর: মুক্তিযোদ্ধাদের প্রিয় স্লোগান ‘জয় বাংলা’।
প্রশ্ন ১৩। কোন সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল?
উত্তর: ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল।
প্রশ্ন ১৪। মুজিবনগর সরকার কত তারিখে শপথ গ্রহণ করে?
উত্তর: মুজিবনগর সরকার ১৯৭১ সালের ১৭ই এপ্রিল শপথ গ্রহণ করে।
প্রশ্ন ১৫। মুক্তিযুদ্ধে সাধারণ মানুষ কীভাবে অংশগ্রহণ করেছিল?
উত্তর: মুক্তিযুদ্ধে সাধারণ মানুষ সরাসরি সম্মুখ যুদ্ধে অংশগ্রহণ তাছাড়াও গোপনে মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা দান এবং মুক্তিযোদ্ধাদের খাদ্য ও আশ্রয়দানের মাধ্যমে অংশগ্রহণ করেছিল।
প্রশ্ন ১৬। কখন মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়?
উত্তর: ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার মধ্য দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়।
প্রশ্ন ১৭। মুজিবনগর সরকার কত তারিখে গঠিত হয়?
উত্তর: মুজিবনগর সরকার ১৯৭১ সালের ১০ই এপ্রিল গঠিত হয়।
প্রশ্ন ১৮। মুজিবনগর সরকার কোথায় গঠিত হয়েছিল?
উত্তর: মুজিবনগর সরকার তৎকালীন মেহেরপুর মহকুমার বৈদ্যনাথতলায় (বর্তমান নাম মুজিবনগর) আমবাগানে গঠিত হয়েছিল।
প্রশ্ন ১৯। মুক্তিযুদ্ধকালে বঙ্গবন্ধু কোন দেশের কারাগারে বন্দী ছিলেন?
উত্তর: মুক্তিযুদ্ধকালে বঙ্গবন্ধু পশ্চিম পাকিস্তানের কারাগারে বন্দী ছিলেন।
প্রশ্ন ২০। কার আহ্বানে বাঙালি জাতি পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে?
উত্তর: জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে বাঙালি জাতি পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
প্রশ্ন ২১। কাদেরকে নিয়ে মুক্তিবাহিনী গঠিত হয়েছিল?
উত্তর : সামরিক ও বেসামরিক বাহিনী নিয়ে মুক্তিবাহিনী গঠিত হয়েছিল।
প্রশ্ন ২২। মুক্তিবাহিনীর উপপ্রধান সেনাপতি কে ছিলেন?
উত্তর: মুক্তিবাহিনীর উপপ্রধান সেনাপতি ছিলেন গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ কে খন্দকার।
প্রশ্ন ২৩। মুক্তিবাহিনীকে কয়টি ব্রিগেড ফোর্সে ভাগ করা হয়েছিল?
উত্তর: মুক্তিবাহিনীকে তিনটি ব্রিগেড ফোর্সে ভাগ করা হয়েছিল।
আমাদের মুক্তিযুদ্ধ পঞ্চম শ্রেণীর বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়:
২. সঠিক শব্দ দিয়ে শূন্যস্থান পূরণ কর।
১। প্রতি বছর___ডিসেম্বর বিজয় দিবস পালন করা হয়।
২। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি ছিলেন___।
৩। জেনারেল ওসমানী___নামে পরিচিত ছিলেন
৪। প্রতিবছর___ডিসেম্বর ‘শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস’ পালন করা হয়।
৫। যুদ্ধ পরিচালনার জন্য সারাদেশকে___টি সেক্টরে ভাগ করা হয়েছিল।
৬। ভাষা আন্দোলন সংঘটিত হয়েছিল___সালে।
৭। মিত্রবাহিনী ও মুক্তিবাহিনী মিলে গঠন করা হয়___।
৮। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রিয় স্লোগান ছিল___।
৯। নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধে ত্রিশ লক্ষ বাঙালি ___ হন।
১০। ১৯৭১ সালের ১১ই জুলাই ___ নামে একটি বাহিনী গঠন করা হয়।
১১। প্রতি বছর ১৬ই ডিসেম্বর আমরা ___ দিবস পালন করি।
১২। মুক্তিযুদ্ধে জীবন উৎসর্গের জন্য সর্বোচ্চ___উপাধি দেওয়া হয়।
১৩। মুক্তিবাহিনীকে তিনটি ___ফোর্সে ভাগ করা হয়েছিল।
১৪। বাঙালি জাতির ইতিহাসে ___ একটি অত্যন্ত গৌরবময় ঘটনা।
উত্তরমালা: ১। ১৬ই; ২। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান; ৩। বঙ্গবীর; ৪। ১৪ই; ৫। ১১টি; ৬। ১৯৫২; ৭। যৌথবাহিনী; ৮। ‘জয় বাংলা’; ৯। শহিদ; ১০। মুক্তিবাহিনী; ১১। বিজয়; ১২। বীরশ্রেষ্ঠ; ১৩। ব্রিগেড; ১৪। মুক্তিযুদ্ধ;
৩. বাম পাশের বাক্যাংশের সাথে ডান পাশের বাক্যাংশ মিল কর।
প্রশ্ন ১। বাম পাশের বাক্যাংশের সাথে ডান পাশের বাক্যাংশ মিল কর:
বাম পাশ | ডান পাশ |
---|---|
(ক) ভাষা আন্দোলন | ১৯৬৬ সালে। |
(খ) গণঅভ্যুত্থান | ১৯৭১ সালে। |
(গ) ছয় দফা আন্দোলন | ১৯৫১ সালে। |
(ঘ) মুক্তিযুদ্ধ | ১৯৭০ সালে। |
(ঙ) সাধারণ নির্বাচন | ১৯৬৯ সালে। |
১৯৭২ সালে। | |
১৯৫২ সালে। |
উত্তরমালা:
(ক) ভাষা আন্দোলন ১৯৫২ সালে।
(খ) গণঅভ্যুত্থান ১৯৬৯ সালে।
(গ) ছয় দফা আন্দোলন ১৯৬৬ সালে।
(ঘ) মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালে।
(ঙ) সাধারণ নির্বাচন ১৯৭০ সালে।
প্রশ্ন ২। বামপাশের বাক্যাংশের সাথে ডানপাশের বাক্যাংশ মিল কর:
বাম পাশ | ডান পাশ |
---|---|
(ক) ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশরা | মুক্তিফোজ। |
(খ) ১৯৭১ সালের ১০ই এপ্রিল | সৈয়দ নজরুল ইসলাম। |
(গ) বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি | মুজিবনগর সরকার গঠিত হয়। |
(ঘ) মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি | এই উপমহাদেশ ছেড়ে চলে যায়। |
(ঙ) ত্রিশ হাজার নিয়মিত যোদ্ধাদের নিয়ে গঠিত বাহিনী | বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান |
আতাউল গণি ওসমানী | |
মুক্তিবাহিনী |
উত্তরমালা:
(ক) ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশরা এই উপমহাদেশ ছেড়ে চলে যায়।
(খ) ১৯৭১ সালের ১০ই এপ্রিল মুজিবনগর সরকার গঠিত হয়।
(গ) বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
(ঘ) মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি আতাউল গণি ওসমানী।
(ঙ) ত্রিশ হাজার নিয়মিত যোদ্ধাদের নিয়ে গঠিত বাহিনী মুক্তিফৌজ।
৪. নিচের কাঠামোবদ্ধ প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
প্রশ্ন ১। মুক্তিযুদ্ধ কী? মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল কেন? মুক্তিযুদ্ধের চারটি ফলাফল বা তাৎপর্য লেখ।
উত্তর: ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে এ দেশের সর্বস্তরের জনগণ যে যুদ্ধের মাধ্যমে দেশকে স্বাধীন ও শত্রুমুক্ত করেছিল তাই মুক্তিযুদ্ধ।
বাংলাদেশকে পাকিস্তানের অধীনতা থেকে মুক্ত করার জন্য মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল।
মুক্তিযুদ্ধের চারটি ফলাফল বা তাৎপর্য হলো-
১. মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা একটি নিজস্ব পতাকা পেয়েছি।
২. এর মাধ্যমে আমরা একটি স্বাধীন ভূখণ্ড পেয়েছি।
৩. স্বাধীন জাতি হিসেবে আমরা বিশ্বের দরবারে পরিচিতি পেয়েছি।
৪. আমরা আমাদের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারের ক্ষমতা পেয়েছি।
প্রশ্ন ২। মুক্তিযুদ্ধ কী? এই যুদ্ধে সমগ্র বাঙালি জড়িয়ে পড়ে কেন? মুক্তিযুদ্ধে নারীদের চারটি ভূমিকা লেখ।
উত্তর: ১৯৭১ সালে দেশকে পাকিস্তানিদের হাত থেকে মুক্ত করার জন্য যে যুদ্ধ হয়েছিল তাই মুক্তিযুদ্ধ।
দেশকে শত্রুমুক্ত করে স্বাধীনতা অর্জনের জন্য এই যুদ্ধে সমগ্র বাঙালি জাতি জড়িয়ে পড়ে।
মুক্তিযুদ্ধে নারীদের চারটি ভূমিকা হলো-
১. নারীরা প্রশিক্ষণ নিয়ে সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে।
২. মুক্তিযুদ্ধের সময় নারীরা মুক্তিযোদ্ধাদেরকে খাবার দিয়ে সাহায্য করতেন।
৩. নারীরা যুদ্ধের সময় বিভিন্ন তথ্য দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করতেন।
৪. নারীরা যুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় দিয়ে সাহায্য করতেন।
প্রশ্ন ৩। মুজিবনগর সরকার কী? মুজিবনগর সরকার কেন গঠন করা হয়েছিল? মুজিবনগর সরকারের চারটি অবদান বা ফলাফল লেখ।
উত্তর: মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন গঠিত বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী সরকার ‘মুজিবনগর সরকার’ নামে পরিচিত।
মুক্তিযুদ্ধকে সঠিক পথে পরিচালনা এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গঠন করার জন্য মুজিবনগর সরকার গঠন করা হয়েছিল।
মুজিবনগর সরকারের চারটি অবদান বা ফলাফল হলো-
১. মুক্তিযুদ্ধের গতি বৃদ্ধি পায়;
২. মুজিবনগর সরকারের নেতৃত্বে সকল শ্রেণির বাঙালি দেশকে ‘শত্রুমুক্ত করার জন্য সশস্ত্র সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে;
৩. দেশে-বিদেশে মুক্তিযুদ্ধের সমর্থন বেড়ে যায়;
৪. মুক্তিযুদ্ধকে সঠিক পথে পরিচালনা করা সম্ভব হয়।
প্রশ্ন ৪। অপারেশন সার্চলাইট কী? অপারেশন সার্চলাইট কেন পরিচালিত হয়েছিল? অপারেশন সার্চলাইটের চারটি ক্ষতিকর দিক লেখ।
উত্তর: ২৫শে মার্চ রাতের অন্ধকারে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কর্তৃক নিরীহ বাঙালিদের ওপর অতর্কিত হামলা অপারেশন সার্চলাইট নামে পরিচিত।
বাঙালি জাতির স্বাধীনতার স্বপ্ন ধূলিসাৎ করা ও তাদের মনে ভীতি সঞ্চার করার জন্য অপারেশন সার্চলাইট পরিচালিত হয়েছিল।
অপারেশন সার্চলাইটের চারটি ক্ষতিকর দিক হলো-
১. অনেক নিরীহ মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করা হয়।
২. নির্বিচারে লুটতরাজ ও ধরপাকড় চলে।
৩. মানুষের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।
৪. জনগণ আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ে।
প্রশ্ন ৫। কাদের নিয়ে মুক্তিবাহিনী গঠিত হয়েছিল? এ বাহিনীর প্রধান সেনাপতি কে ছিলেন? বেসামরিক জনগণ যেভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল তা চার বাক্যে লেখ।
উত্তর: ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সাধারণ মানুষ ও – সামরিক বাহিনীর বাঙালি সদস্যদের নিয়ে মুক্তিবাহিনী গঠিত হয়েছিল। এ বাহিনীর প্রধান সেনাপতি ছিলেন জেনারেল মুহাম্মদ আতাউল – গণি ওসমানী।
বেসামরিক জনগণের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ সম্পর্কে চারটি বাক্য হলো-
১. তারা সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন।
২. মুক্তিযোদ্ধাদের খাদ্য ও আশ্রয় দিয়েছেন।
৩. মুক্তিযোদ্ধাদের হানাদার বাহিনীর গতিবিধি সম্পর্কে তথ্য দেন।
৪. মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গড়ে তুলেছেন।
প্রশ্ন ৬। বুদ্ধিজীবী কারা? বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়েছিল কেন? বুদ্ধিজীবী হত্যার চারটি ফলাফল লেখ।
উত্তর: জ্ঞানী-গুণী ও মুক্তবুদ্ধিসম্পন্ন ব্যক্তিদের বুদ্ধিজীবী বলা হয়।
মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে পরাজয় নিশ্চিত জেনে পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের দেশীয় দোসররা এদেশকে মেধাশূন্য করার পরিকল্পনা হিসেবে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে।
বুদ্ধিজীবী হত্যার চারটি ফলাফল হলো-
১. আমরা দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হারাই।
২. মুক্তিসেনারা যুদ্ধক্ষেত্রে আরও তেজোদীপ্ত হয়ে ওঠে।
৩. মেধা ও মৌলিক চেতনা বিকাশে যারা অবদান রাখেন জাতি তাদের হারায়।
৪. বাঙালি জাতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
প্রশ্ন ৭। মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশকে কয়টি সেক্টরে ভাগ করা হয়েছিল? কেন ভাগ করা হয়েছিল? মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের চারটি অবদান লেখ।
উত্তর: মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশকে ১১টি সেক্টরে ভাগ করা হয়েছিল। যুদ্ধ পরিচালনার সুবিধার জন্য ১১টি সেক্টরে ভাগ করা হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধার চারটি অবদান হলো-
১. দেশের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন।
২. স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র উপহার দিয়েছেন।
৩. দেশকে শত্রুমুক্ত করেছেন।
৪. দেশের মানুষের জানমাল রক্ষা করেছেন।