পঞ্চম শ্রেণি আমরা তোমাদের ভুলব না: যাঁরা ন্যায়ের পথে যুদ্ধ করতে গিয়ে মারা যান, তাঁদের আমরা শহিদ বলি। এ দেশের জন্য এবং এ দেশের মানুষের জন্য বহু কাল ধরে বহু মানুষ প্রাণ দিয়েছেন, শহিদ হয়েছেন।
আজ থেকে প্রায় দুশো বছর আগে ইংরেজদের নির্যাতন থেকে এ দেশের কৃষককে বাঁচাতে গিয়ে যুদ্ধ করেছিলেন তিতুমীর। ইংরেজদের আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য তিনি বাঁশের কেল্লা বানিয়েছিলেন। সেই কেল্লায় তিনি তাঁর কৃষক সৈন্যদের সাথে নিয়ে যুদ্ধ করতে করতে শহিদ হয়েছিলেন। আমরা তাঁকে কখনো ভুলব না।
প্রায় শত বছর আগে ইংরেজ শাসন থেকে এ দেশকে মুক্ত করতে যুদ্ধ করেছিলেন সূর্যসেন। যুদ্ধ করেছিলেন প্রীতিলতাসহ আরো অনেকে। সূর্যসেনকে আটক করার পর তাঁকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়। প্রীতিলতা আত্মাহুতি দেন। অনেক আন্দোলন শেষে ১৯৪৭ সালে ভারত আর পাকিস্তান স্বাধীন হয়। আমাদের পূর্ব বাংলা পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হয়। এ দেশের মানুষ স্বাধীনতার জন্য, পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন। আমরা তাঁদের স্মরণ করব।
বায়ান্নোর ভাষা আন্দোলনের শহিদদের কথা আমরা সবাই জানি সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারসহ আরো অনেক নাম। বাংলাভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে তাঁরা প্রাণ দিয়েছিলেন। তাঁদের স্মরণ করেই আমাদের শহিদ মিনার তৈরি করা হয়েছে। প্রতি বছর ২১শে ফেব্রুয়ারিতে আমরা তাঁদের স্মরণ করি।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগে পাকিস্তানের শাসক ছিলেন আইয়ুব খান। তার অত্যাচার ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে ১৯৬৯ সালে একটি গণঅভ্যুত্থান হয়েছিল। সেই অভ্যুত্থানের একজন ছাত্রনেতা ছিলেন আসাদ। পুলিশ খুব কাছ থেকে তাঁকে গুলি করে হত্যা করেছিল। তাঁর নামকে স্মরণে রাখতে ঢাকায় রয়েছে আসাদ গেট। মতিয়ুর নামের নবম শ্রেণির একজন শিক্ষার্থীকেও রাস্তায় গুলি করে হত্যা করা হয়। আনোয়ারা বেগম নামের একজন মা-ও নিহত হন। তিনি তখন ঘরের মধ্যে বসে তাঁর সন্তানকে খাবার খাওয়াচ্ছিলেন।
ক্যান্টনমেন্টের মধ্যে আটক রেখে হত্যা করা হয় সার্জেন্ট জহুরুল হককে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের বাঁচাতে গিয়ে নিহত হন অধ্যাপক শামসুজ্জোহা। নিহত হন কৃষক-শ্রমিক আর খেটে-খাওয়া অনেক মানুষ। তাঁরা সবাই শহিদ। তাঁরা আমাদের স্মৃতিতে চিরদিন অমলিন থাকবেন।
আমাদের মুক্তিযুদ্ধে লক্ষ লক্ষ মানুষ শহিদ হয়েছেন। তাঁদের কথা আমরা বইয়ে, কবিতায়, সিনেমায়, গানে ও ছবিতে নানাভাবে পাই। তাঁদের আমরা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরও এদেশে অন্যায়-অত্যাচার থামে না। তাই মানুষ প্রতিবাদ করে। শিক্ষার অধিকার রক্ষা করতে গিয়ে ১৯৮৩ সালে শহিদ হন ছাত্রনেতা সেলিম-দেলোয়ারসহ আরো অনেকে। গণতন্ত্রের জন্য বুকে-পিঠে শ্লোগান লিখে ১৯৮৭ সালে শহিদ হন নুর হোসেন। ১৯৯০ সালে নিহত হন ডাক্তার মিলন ও জেহাদ। তারপর গণঅভ্যুত্থান ঘটে। সারাদেশে অনেক মানুষ মারা যায়। তাঁরা সবাই শহিদ। আমরা তাঁদের কখনো ভুলব না।
এত ত্যাগের পরও এ দেশের মানুষ অধিকার পায় না, বৈষম্য কমে না। অধিকারের দাবি ও বৈষম্যের কথা বলতে গিয়ে এদেশের শিক্ষার্থীরা তাই ২০২৪ সালে আবার রাস্তায় নামে। সরকারি বাহিনী নির্মমভাবে সেই আন্দোলন দমন করতে চায়।
পুলিশের অত্যাচারের বিরুদ্ধে রংপুরে ছাত্রনেতা আবু সাঈদ দুই হাত প্রসারিত করে দাঁড়ান। পুলিশ তাঁকে খুব কাছ থেকে গুলি করে হত্যা করে।
এতে আন্দোলন সবার মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। সারা দেশের মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। বিশাল এক গণঅভ্যুত্থানের সৃষ্টি হয়। ঢাকার উত্তরায় শিক্ষার্থী মীর মুগ্ধ আন্দোলনরত সবাইকে পানি বিতরণ করতে করতে নিহত হন। নিহত হন নাফিজ, নাফিসা, আনাসসহ অগণিত প্রাণ। মায়ের কোলের শিশু, বাবার সাথে খেলতে থাকা শিশু, রিকশাওয়ালা, শ্রমিক, কৃষক, ফেরিওয়ালা, চাকুরিজীবী, মা, পথচারী কেউ বাদ যায় না। সারা দেশে হত্যা করা হয় হাজারো মানুষকে। আহত হন অসংখ্য মানুষ। তাঁরা সবাই একটি বৈষম্যহীন বাংলাদেশের জন্য রক্ত দিয়েছেন। সবার অধিকার থাকবে এবং সবাই মিলেমিশে বাস করতে পারবে এমন একটা দেশের জন্যই তাঁরা শহিদ হয়েছেন। আমরা তাঁদের কখনো ভুলব না।
১. শব্দগুলো পাঠ থেকে খুঁজে বের করি। অর্থ বলি।
আক্রমণ, কেল্লা, অভ্যুত্থান, ক্যান্টনমেন্ট, আন্দোলন, বৈষম্য;
উত্তর:
আক্রমণ – অন্যের উপর হামলা।
কেল্লা – দূর্গ, সুরক্ষিত আশ্রয়।
অভ্যুত্থান – গণ আন্দলন, বিদ্রোহ।
ক্যান্টনমেন্ট – সেনানিবাস।
আন্দোলন – কোনো লক্ষ অর্জনের উদ্দেশ্যে প্রচার; সংঘবদ্ধ বিক্ষোভ।
বৈষম্য – পার্থক্য বা অসাম্য।
২. ঘরের ভিতরের শব্দগুলো খালি জায়গায় বসিয়ে বাক্য তৈরি করি।
ফাঁসিতে, কৃষককে, প্রসারিত, ১৯৪৭, শহিদ মিনার;
ক. তিতুমীর যুদ্ধ করেছিলেন এ দেশের ___ বাঁচাতে।
খ. সূর্যসেনকে ___ ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়।
গ. ভারত ও পাকিস্তান স্বাধীন হয় ___ সালে।
ঘ. ভাষা শহিদদের স্মরণে তৈরি হয়েছে ___।
ঙ. পুলিশের গুলির মুখে আবু সাঈদ দুই হাত ___ করে দাঁড়ান।
উত্তর:
ক. তিতুমীর যুদ্ধ করেছিলেন এ দেশের কৃষককে বাঁচাতে।
খ. সূর্যসেনকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়।
গ. ভারত ও পাকিস্তান স্বাধীন হয় ১৯৪৭ সালে।
ঘ. ভাষা শহিদদের স্মরণে তৈরি হয়েছে শহিদ মিনার।
ঙ. পুলিশের গুলির মুখে আবু সাঈদ দুই হাত প্রসারিত করে দাঁড়ান।
৩. প্রশ্নগুলোর উত্তর বলি ও লিখি।
ক. কাদের আমরা শহিদ বলি?
উত্তর: যাঁরা ন্যায়ের পথে যুদ্ধ করতে গিয়ে প্রাণ দেন, তাঁদের আমরা শহিদ বলি।
খ. ইংরেজদের বিরুদ্ধে দেশ বাঁচাতে কারা যুদ্ধ করেছিলেন?
উত্তর: তিতুমীর, সূর্যসেন, প্রীতিলতা এবং আরও অনেকে ইংরেজদের বিরুদ্ধে দেশ বাঁচাতে যুদ্ধ করেছিলেন।
গ. বায়ান্নোর ভাষা শহিদদের নাম লিখি।
উত্তর: বায়ান্নোর ভাষা শহিদদের মধ্যে সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার ইত্যাদি।
ঘ. ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান সম্পর্কে যা জানি তা লিখি।
উত্তর: ১৯৬৯ সালে আইয়ুব খানের দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থান ঘটে। এ আন্দোলনে ছাত্রনেতা আসাদ পুলিশের গুলিতে শহিদ হন, যার স্মরণে ঢাকায় আসাদ গেট নির্মাণ করা হয়। এছাড়া, নবম শ্রেণির ছাত্র মতিয়ুর, আনোয়ারা বেগম ও সার্জেন্ট জহুরুল হকসহ অনেকেই শহিদ হন।
ঙ. ২০২৪ সালের অভ্যুত্থানে সহস্র মানুষ জীবন দিয়েছেন কেন?
উত্তর: ২০২৪ সালের অভ্যুত্থানে সহস্র মানুষ জীবন দিয়েছেন একটি বৈষম্যহীন ও সমানাধিকারের বাংলাদেশ গড়ার জন্য। তারা চেয়েছিলেন একটি এমন দেশ, যেখানে সবাই সমান সুযোগ পাবে এবং শান্তিতে বাস করতে পারবে।
পঞ্চম শ্রেণি আমরা তোমাদের ভুলব না:
৪. বিপরীত শব্দ লিখি এবং তা দিয়ে একটি করে বাক্য তৈরি করি।
ন্যায় – অন্যায় – অন্যায়কে কখনোই সমর্থন করা উচিত নয়।
যুদ্ধ – শান্তি – সারা বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা আমাদের দায়িত্ব।
নির্মম – দয়ালু – একজন সত্যিকারের নেতা দয়ালু ও সহানুভূতিশীল হন।
গণতন্ত্র – স্বৈরতন্ত্র – গণতন্ত্র মানুষের মতামতের স্বাধীনতা নিশ্চিত করে, কিন্তু স্বৈরতন্ত্র তা দমন করে।
বৈষম্য – সমতা – সমাজে সকল মানুষের জন্য সমতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
৫. ঠিক উত্তরটিতে টিক (√) চিহ্ন দিই।
ক. ১৯৪৭ সালে পূর্ব বাংলা কার অন্তর্ভুক্ত হয়?
১. ভারতের
২. পাকিস্তানের √
৩. শ্রীলংকার
৪. ভুটানের
খ. বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগে পাকিস্তানের শাসক ছিলেন-
১. ইয়াহিয়া খান
২. বেনজীর ভুট্টো
৩. আইয়ুব খান √
৪. খাজা নাজিমুদ্দিন
গ. ৬৯-এর অভ্যুত্থানে কোন ছাত্রনেতা শহিদ হন?
১. আসাদ √
২. জব্বার
৩. নুর হোসেন
৪. মতিয়ুর
ঘ. বুকে পিঠে শ্লোগান লিখে নুর হোসেন শহিদ হন-
১. ১৯৯০ সালে
২. ১৯৮৩ সালে
৩. ১৯৮৭ সালে √
৪. ২০০২ সালে
ঙ. আন্দোলনে পানি বিতরণ করতে করতে মীর মুগ্ধ শহিদ হন-
১. ঢাকার আজিমপুরে
২. নরসিংদীর বেলাবোতে
৩. ঢাকার উত্তরায় √
৪. রংপুরের পার্কে
পঞ্চম শ্রেণি আমরা তোমাদের ভুলব না:
৬. পাঠে উল্লিখিত বীর শহিদদের একটি ধারাবাহিক তালিকা প্রস্তুত করি। শিক্ষককে দেখাই।
উত্তর:
- তিতুমীর কৃষকদের নিয়ে ইংরেজদের বিরুদ্ধে লড়াই চালাতে গিয়ে শহিদ হন।
- সূর্যসেন ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্তির লক্ষ্যে সংগ্রাম করেন এবং শেষ পর্যন্ত ফাঁসিতে প্রাণ হারান।
- প্রীতিলতা ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে আত্মত্যাগ করেন।
- সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারসহ অনেকে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেন।
- আসাদ ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে পুলিশের গুলিতে নিহত হন।
- মতিয়ুর ১৯৬৯ সালের ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান।
- আনোয়ারা বেগম সন্তানকে খাওয়ানোর সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান।
- সার্জেন্ট জহুরুল হক বন্দি অবস্থায় ক্যান্টনমেন্টে নির্মমভাবে নিহত হন।
- অধ্যাপক শামসুজ্জোহা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের রক্ষার চেষ্টায় শহিদ হন।
- সেলিম ও দেলোয়ার ১৯৮৩ সালে শিক্ষার অধিকারের দাবিতে আন্দোলন করতে গিয়ে প্রাণ হারান।
- নুর হোসেন ১৯৮৭ সালে গণতন্ত্রের দাবিতে জীবন উৎসর্গ করেন।
- ডা. মিলন ১৯৯০ সালের গণআন্দোলনে শহিদ হন।
- জেহাদ ১৯৯০ সালের গণঅভ্যুত্থানে প্রাণ দেন।
- আবু সাঈদ ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে পুলিশের গুলিতে নিহত হন।
- মীর মুগ্ধ আন্দোলনকারীদের জন্য পানি সরবরাহ করতে গিয়ে শহিদ হন।
- নাফিজ, নাফিসা, আনাসসহ অনেকে ২০২৪ সালের আন্দোলনে প্রাণ হারান।
- অগণিত মানুষ, যাঁদের মধ্যে সাধারণ পথচারী, কৃষক, শ্রমিক, ফেরিওয়ালা, মা-বাবা ও শিশুরাও ছিলেন, ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে শহিদ হন।
Codehorse Learn Free
Thanks 🥰