স্বদেশ পঞ্চম শ্রেণীর বাংলা প্রশ্নোত্তর: ষড়ঋতুর লীলাভূমি এই বাংলাদেশের রূপের কোনো শেষ নেই। আর এই রূপকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে থাকা অসংখ্য নদী। যে কারণে বাংলাদেশকে নদীমাতৃক দেশ বলা হয়। আর নদীর তীরে বসবাসকারী মানুষেরা নদীর সাথে মিতালি করে চলে। মানুষের এই জীবনযাত্রা, নদীর জোয়ার, পাখপাখালির কিচিরমিচির শব্দ একটি কিশোর মনকে নাড়া দেয়। সে নদীর ধারে বসে চিরচেনা বাংলার রূপসৌন্দর্য উপভোগ করে। মাঠের পরে মাঠে নানা কাজে লেগে থাকা মানুষকে দেখে তার সারা দিন কাটে। দেশের মাটি, মানুষ ও প্রকৃতির প্রতি তার স্নেহ-ভালোবাসা জাগে এবং মনের মধ্যে সে ঐসব ছবি আঁকে।
স্বদেশ পঞ্চম শ্রেণীর বাংলা প্রশ্নোত্তর:
১. কবিতাটির মূলভাব জেনে নিই।
বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ, অর্থাৎ নদী এদেশের মাতা বা মা। এদেশের সবখানেই নদী দেখা যায়। ‘স্বদেশ’ কবিতায় বাংলাদেশের প্রকৃতি ও মানুষের জীবনযাত্রার ছবি তুলে ধরা হয়েছে। একটি ছেলে সেই ছবি দেখছে ও তার মনের ভিতরে ধরে রাখছে। নদীর জোয়ার, নদীর তীরে নৌকা বেঁধে রাখা, গাছে গাছে পাখির কলকাকলি সবই ছেলেটির ভাল লাগছে। তাই দেশের জন্য তার মায়া-মমতা ও ভালোবাসার অনুভূতি জাগছে।
২. শব্দগুলো পাঠ থেকে খুঁজে বের করি। অর্থ বলি।
কড়ি, টুকটুক, শিল্পী, পাখপাখালি;
উত্তর:
কড়ি – এক ধরনের ছোট সাদা ঝিনুক।
টুকটুক – গাঢ়, সুন্দর।
শিল্পী – শিল্প কর্মচারী, কারিগর।
পাখপাখালি – নানা ধরনের পাখি।
৩. ঘরের ভিতরের শব্দগুলো খালি জায়গায় বসিয়ে বাক্য তৈরি করি।
টুকটুকে, বিখ্যাত, পাখপাখালির, কড়ি;
ক. অনেক আগে এখনকার মতো টাকা-পয়সা ছিল না। তখন লোকে কেনা-বেচা করত___দিয়ে।
খ. মেলা থেকে বোনের জন্য___লাল একটা জামা কিনে আনব।
গ. জয়নুল আবেদিন ছিলেন একজন___চিত্রশিল্পী।
ঘ. বাংলাদেশের গাছে গাছে শোনা যায়___কলকাকলি।
উত্তর:
ক. অনেক আগে এখনকার মতো টাকা-পয়সা ছিল না। তখন লোকে কেনা-বেচা করত কড়ি দিয়ে।
খ. মেলা থেকে বোনের জন্য টুকটুকে লাল একটা জামা কিনে আনব।
গ. জয়নুল আবেদিন ছিলেন একজন বিখ্যাত চিত্রশিল্পী।
ঘ. বাংলাদেশের গাছে গাছে শোনা যায় পাখপাখালির কলকাকলি।
৪. নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর বলি ও লিখি।
প্রশ্ন ক. গ্রাম বাংলার কোন ছবিটি আমাদের চেনা?
উত্তর: নদী, নদীর জোয়ার, নদীতে সারে সারে নৌকা বাঁধা আছে-গ্রামবাংলার এই ছবিটি আমাদের চেনা।
প্রশ্ন খ. কোন ছবিটি টাকা দিয়ে কেনা যায় না?
উত্তর: নদী, নদীর জোয়ার, নদীতে সারে সারে নৌকা বাঁধা, একটি ছেলের আপন মনে নদীর ধারে বসে থাকা আর নদীর এক তীরে একটি জারুল গাছে দুটি’ হ হলুদ পাখির বসে থাকা- এসব নিয়ে গ্রামবাংলার যে ছবি তা টাকা দিয়ে কেনা যায় না।
প্রশ্ন গ. স্বদেশ কবিতায় কী দেখে ছেলেটির দিন কেটে যায়?
উত্তর: অন্তহীন মাঠ, নানা কাজের নানান বেশের মানুষ, মাঠের – মানুষের মাঠে যাওয়া আর হাটের মানুষের হাটে যাওয়া দেখে ‘ছেলেটির সারাটি দিন কাটে।
প্রশ্ন ঘ. ‘সব মিলে এক ছবি’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: প্রকৃতি ও জনজীবন নিয়ে আমাদের দেশের যে ছবি সেটিকে কবি ‘সব মিলে এক ছবি’ বলেছেন। বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। এই নদীতে জোয়ার আসে, নদীর ঘাটে সারে সারে নৌকা বাঁধা থাকে। নদীর দুই তীরে নানা রকম গাছপালা। সে গাছে সারা দিন পাখি ডাকে। এ দেশে রয়েছে দিগন্তজোড়া মাঠ। নানান কাজের নানান বেশের মানুষ বাস করে এই দেশে। এই বাড়ি, বাগান, মাঠ, ফসল, পাখপাখালি মিলে যে ছবি সেটিকে কবি ‘সব মিলে এক ছবি’ বলেছেন।
৫. নিচের কথাগুলো বুঝে নিই।
ক. এমনি পাওয়া এই ছবিটি কড়িতে নয় কেনা।
বাংলাদেশ চির সবুজের দেশ। গাছে গাছে পাখি। এঁকেবেঁকে চলেছে অসংখ্য নদী। এর এক দিকে পাহাড়, একদিকে হাওড় আর অন্য দিকে সাগর। একদিকে ফসলের খেত, অন্যদিকে চা-বাগান। সবকিছুতেই প্রকৃতির এক অপরূপ ছোঁয়া। রং-তুলি দিয়ে আঁকা ছবি কেনা যায়, কিন্তু শান্ত-শ্যামল প্রকতির এই মন জুড়ানো ছবি টাকা-পয়সা দিয়ে কেনা যায় না।
খ. মাঠের পরে মাঠ চলেছে নেই যেন এর শেষ।
সুজলা-সুফলা শস্য-শ্যামলা আমাদের এই বাংলাদেশ। মাঠে মাঠে ফসলের খেত। বাতাস বয়ে যায় তার ওপর দিয়ে। মনে হয়, নদীর ঢেউ মাঠে ছড়িয়ে পড়েছে। অবারিত খোলা সবুজ মাঠ, মাঝে মাঝে গ্রাম, আবার মাঠ। গ্রাম মাঠের সাথে মিশে যায়। মনে হয় সবকিছু মাঠের উপাদান। মাঠের পর মাঠ চলে গেছে, কোথাও যেন শেষ হচ্ছে না।
গ. এই যে ছবি এমন আঁকা ছবির মতো দেশ, দেশের মাটি দেশের মানুষ নানা রকম বেশ।
নদী, নালা, পাহাড়, হাওড়, সমুদ্র সব মিলে এদেশ ছবির মতো। এদেশের প্রতিটি ঋতু বৈচিত্র্যময়। প্রকৃতি মাঝে মাঝে রং বদলায়। যেমন ছবিতে নানান রং ব্যবহার করা হয়, তেমনি এদেশের মানুষজনও নানারকমের বেশভূষা পরেন।
৬. ঠিক উত্তরটিতে টিক (√) চিহ্ন দিই।
ক. নদীর তীরে সারি সারি কী রাখা ছিল?
১. জেলেদের জাল
২. গাছের গুঁড়ি
৩. খড়ের গাদা
৪. নৌকা√
খ. ছেলেটির সারাদিন কীভাবে কাটে?
১. খেলাধুলা করে
২. মাঠের মানুষ আর হাটের মানুষ দেখে√
৩. পড়াশোনা করে
৪. বন্ধুদের সঙ্গে গল্পগুজব করে
গ. ‘স্বদেশ’ কবিতায় ছেলেটি কীভাবে তার ছবি আঁকে?
১. রং-তুলি দিয়ে
২. পেনসিল দিয়ে
৩. নিজের মনের মধ্যে√
৪. মা বাবার সহযোগিতা নিয়ে
ঘ. ‘স্বদেশ’ কবিতায় কবি বাংলাদেশের কোন ছবিটি তুলে ধরেছেন?
১. বাংলাদেশের শহরের মানুষের ছবি
২. নদীর পাড়ের জেলেদের ছবি
৩. বাংলাদেশের পাহাড়ি মানুষের ছবি
৪. বাংলাদেশের প্রকৃতি ও মানুষের জীবনযাত্রার ছবি√
ঙ. ‘এই ছেলেটির মুখ/সারাদেশের সব ছেলেদের মুখেতে টুকটুক’- কথাটি কী অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে?
১. ছেলেটির মুখের রং
২. ছেলেটির মুখের গড়ন
৩. ছেলেটির মুখের প্রতিচ্ছবি√
৪. ছেলেটির মুখের কথা
৭. শূন্যস্থান পূরণ করি।
‘এই যে ছবি এমন আঁকা
ছবির মতো দেশ,
দেশের মাটি দেশের মানুষ
নানা রকম বেশ।
বাড়ি বাগান পাখপাখালি
সব মিলে এক ছবি
নেই তুলি নেই রঙ তবুও
আঁকতে পারি সবই।’
৮. ডান দিক থেকে কবিতায় ব্যবহৃত ঠিক কথাটি নিয়ে খালি জায়গায় বসাই।
ক. একলা বসে আপন মনে বসে ..। পুকুর পাড়ে/গাছের তলে/ নদীর ধারে
খ. এমনি পাওয়া এই ছবিটি নয় কেনা। টাকায়/কড়িতে/সোনায়
গ. এক পাশে তার জারুল গাছে দুটি………… । হলুদ পাখি/জারুল ফুল/শালিক পাখি
উত্তর:
ক. একলা বসে আপন মনে বসে নদীর ধারে।
খ. এমনি পাওয়া এই ছবিটি কড়িতে নয় কেনা।
গ. এক পাশে তার জারুল গাছে দুটি হলুদ পাখি।
স্বদেশ পঞ্চম শ্রেণীর বাংলা প্রশ্নোত্তর:
৯. কর্ম-অনুশীলন।
নিচের নির্দেশনা অনুযায়ী আমাদের দেশ সম্পর্কে একটি রচনা লিখি।
আমাদের দেশের নাম, দেশের সীমারেখা ও আয়তন, রাজধানী, বিভাগীয় শহর, প্রধান নদনদী, জনসংখ্যা ও ভাষা, জাতীয় প্রতীকসমূহ (ফুল, ফল, মাছ, পশু, পাখি), প্রকৃতি ও পরিবেশ।
আমাদের দেশ
আমাদের দেশের নাম বাংলাদেশ। এটি দক্ষিণ এশিয়ার একটি সুন্দর দেশ। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা লাভের মাধ্যমে বাংলাদেশ বিশ্বের মানচিত্রে স্থান পায়।
সীমারেখা ও আয়তন
বাংলাদেশের উত্তরে ভারত, পশ্চিমে ভারত, পূর্বে ভারত ও মিয়ানমার এবং দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর অবস্থিত। দেশের মোট আয়তন ১,৪৭,৫৭০ বর্গকিলোমিটার।
রাজধানী ও বিভাগীয় শহর
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা। এটি দেশের সবচেয়ে বড় শহর এবং অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও প্রশাসনিক কেন্দ্র। বাংলাদেশে মোট ৮টি বিভাগ রয়েছে—ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট, রংপুর ও ময়মনসিংহ।
প্রধান নদনদী
বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। দেশের প্রধান নদীগুলো হলো পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, গড়াই, তিস্তা ও সুরমা। এসব নদী আমাদের কৃষি, পরিবহন ও জলের প্রধান উৎস।
জনসংখ্যা ও ভাষা
বাংলাদেশের জনসংখ্যা প্রায় ১৭ কোটি। এখানকার মানুষের প্রধান ভাষা বাংলা। এছাড়া বিভিন্ন অঞ্চলে ভিন্ন ভিন্ন আঞ্চলিক ভাষাও প্রচলিত রয়েছে।
জাতীয় প্রতীকসমূহ
-
জাতীয় ফুল: শাপলা
-
জাতীয় ফল: কাঁঠাল
-
জাতীয় মাছ: ইলিশ
-
জাতীয় পশু: রয়েল বেঙ্গল টাইগার
-
জাতীয় পাখি: দোয়েল
প্রকৃতি ও পরিবেশ
বাংলাদেশের প্রকৃতি অপূর্ব সুন্দর। এখানে ছয়টি ঋতু রয়েছে—গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত ও বসন্ত। আমাদের দেশে সুন্দরবন, সিলেটের চা বাগান, কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত, পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়সহ অনেক প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রয়েছে। তবে পরিবেশ দূষণ রোধে আমাদের সচেতন হতে হবে।
উপসংহার
বাংলাদেশ আমাদের গর্বের দেশ। আমরা এই দেশকে ভালোবাসি এবং এর উন্নতির জন্য সবাই মিলে কাজ করব।