পঞ্চম শ্রেণীর বাংলা স্মরণীয় যাঁরা বরণীয় যাঁরা: ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর স্বাধীন হয় বাংলাদেশ। কিন্তু এ স্বাধীনতা অর্জন করতে গিয়ে এ দেশকে চরম মূল্য দিতে হয়েছে। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এবং তাদের এদেশীয় দোসর রাজাকার, আলবদর, আল-শামস্ বাহিনী দীর্ঘ নয় মাস ধরে দেশকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে। নিরীহ বাঙালিদের নির্বিচারে নির্যাতন ও হত্যা করে। অবশেষে বাঙালির বিজয়ের পূর্বমুহূর্তে তারা এ দেশের বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করতে থাকে। ১৯৭১ সালের পঁচিশে মার্চের কালরাতে তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনষী শিক্ষক এম. মুনিরুজ্জামান, জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা, ড. গোবিন্দচন্দ্র, দেবকে দিয়ে শুরু করে বুদ্ধিজীবী হত্যা। দীর্ঘ নয় মাস ধরে তারা এ হত্যাযজ্ঞ চলায়। সেই ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালের ১৪ই ডিসেম্বর বিজয় দিবসের মাত্র দুই দিন আগে তারা অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী, শহীদুল্লা কায়সার, ফজলে রাব্বীসহ বহু গুণীজনকে হত্যা করে। পাকিস্তানি শাসকবর্গ সুপরিকল্পিতভাবে এ দেশের খ্যাতিমান শিক্ষক, সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে। যেন বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পরও মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে আমরা আমাদের স্বাধীনতা অর্জন করেছি। এখন আমাদের উচিত শহিদ বুদ্ধিজীবীদের জীবন ও কর্মপথ অনুসরণ করে নিজেদের এবং প্রিয় দেশকে আলোকিত করা।
পঞ্চম শ্রেণীর বাংলা স্মরণীয় যাঁরা বরণীয় যাঁরা:
১. শব্দগুলো পাঠ থেকে খুঁজে বের করি। অর্থ বলি।
অবরুদ্ধ, অবধারিত, আত্মদানকারী, নির্বিচারে, বরেণ্য, পাষন্ড, মনস্বী, খ্যাতনামা;
উত্তর:
অবরুদ্ধ – শত্রু দিয়ে বেষ্টিত।
অবধারিত – অনিবার্য।
আত্মদানকারী -দেশের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন যিনি।
নির্বিচারে -কোনো রকম বিচার বিবেচনা ছাড়া।
বরেণ্য – মান্য।
পাষণ্ড – নির্দয়।
মনম্বী – উদারমনা।
খ্যাতনামা – প্রসিদ্ধ, বিখ্যাত বা সুপরিচিত।
২. ঘরের ভিতরের শব্দগুলো খালি জায়গায় বসিয়ে বাক্য তৈরি করি।
অবরুদ্ধ, অবধারিত, আত্মদানকারী, বরেণ্য, নির্বিচারে, খ্যাতনামা, মনস্বী;
ক. তারা বুঝতে পারে যে, তাদের পরাজয়___।
খ. দেশের ভিতরে___জীবনযাপন করতে করতে প্রাণ দেন এদেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ।
গ. পাকিস্তানিরা একে একে হত্যা করে এদেশের মেধাবী, আলোকিত ও___মানুষদের।
ঘ. মুক্তিযুদ্ধে শহিদরা মহান___হিসাবে চিরস্মরণীয়।
ঙ. পঁচিশে মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনারা___হত্যা করে নিদ্রিত মানুষকে।
চ. অধ্যাপক গোবিন্দচন্দ্র দেব ছিলেন দর্শনশাস্ত্রের___শিক্ষক।
উত্তর:
ক. তারা বুঝতে পারে যে, তাদের পরাজয় অবধারিত।
খ. দেশের ভিতরে অবরুদ্ধ জীবনযাপন করতে করতে প্রাণ দেন এদেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ।
গ. পাকিস্তানিরা একে একে হত্যা করে এদেশের মেধাবী, আলোকিত ও বরেণ্য মানুষদের।
ঘ. মুক্তিযুদ্ধে শহিদরা মহান আত্মদানকারী হিসাবে চিরস্মরণীয়।
ঙ. পঁচিশে মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনারা নির্বিচারে হত্যা করে নিদ্রিত মানুষকে।
চ. অধ্যাপক গোবিন্দচন্দ্র দেব ছিলেন দর্শনশাস্ত্রের খ্যাতনামা শিক্ষক।
৩. নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর বলি ও লিখি।
ক. ১৯৭১ সালের পঁচিশে মার্চ রাতে পাকিস্তানি সৈন্যরা এদেশে কী করেছিল?
উত্তর: ১৯৭১ সালের পঁচিশে মার্চ পাকিস্তানি সেনারা গভীর রাতে ঢাকার নিরস্ত্র, ঘুমন্ত মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। আক্রমণ চালায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাস, ব্যারাক ও আবাসিক এলাকায়। নির্বিচারে হত্যা করে সেসব এলাকার বাসিন্দাদের। সেই সঙ্গে হত্যা করতে থাকে এদেশের মেধাবী, আলোকিত ও বরেণ্য ব্যক্তিদের। এ রাতেই হত্যা করা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনস্বী শিক্ষক এম. মুনিরুজ্জামান, জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা, ড. গোবিন্দচন্দ্র দেবকে। ১৯৭১ সালের পঁচিশে মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনারা এদেশের মুক্তিকামী সংবাদপত্র অফিসগুলোও পুড়িয়ে দেয়। তারা লেখক-সাংবাদিক শহিদ সাবের ও মেহেরুন্নেসাকে হত্যা করে।
খ. কোন শহিদ বুদ্ধিজীবী প্রথম পাকিস্তানি গণপরিষদে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি জানান? তাঁর সম্পর্কে বলি ও লিখি।
উত্তর: শহিদ বুদ্ধিজীবী ধীরেন্দ্রনাথ দত্তই প্রথম পাকিস্তান গণপরিষদে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি জানান। ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ছিলেন প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ ও আইনজীবী। ১৯৪৮ সালে পাকিস্তান গণপরিষদে তিনিই প্রথম বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি তুলেছিলেন। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি শত্রুসেনারা ৮৫ বছর বয়সের এই ব্যক্তিকে কুমিল্লার বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করে। ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত বাঙালির গর্ব।
গ. শহিদ সাবের কে ছিলেন? তিনি কীভাবে শহিদ হন?
উত্তর: শহিদ সাবের ছিলেন ছিলেন প্রখ্যাত লেখক ও সাংবাদিক। ১৯৭১ সালের পঁচিশে মার্চ পাকিস্তানি সেনারা এদেশের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতো সংবাদপত্র অফিসগুলোতেও আগুন দেয়। ঐ রাতে তারা দৈনিক ‘সংবাদ’ অফিসে আগুন দেয়। শহিদ সাবের ঐ’ রাতে অফিসেই ঘুমাচ্ছিলেন। ঘুমন্ত অবস্থায় তিনি আগুনে পুড়ে শহিদ হন।
ঘ. রণদাপ্রসাদ সাহাকে কেন দানবীর বলা হয়?
উত্তর: এদেশের সাধারণ মানুষের মঙ্গল ও কল্যাণের জন্য নিজেকে সঁপে দিয়েছিলেন রণদাপ্রসাদ সাহা। দানশীলতার জন্য লোকে তাঁকে ডাকত ‘দানবীর’ বলে। রণদাপ্রসাদ সাহা ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনাদের হাতে শহিদ হন।
ঙ. দুজন শহিদ সাংবাদিকের নাম বলি।
উত্তর: দুজন শহিদ সাংবাদিক হলেন: শহিদ সাবের ও মেহেরুন্নেসা।
চ. আমরা কেন চিরদিন শহিদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণ করব?
উত্তর: বুদ্ধিজীবীরা জাতির বিবেক। তাঁরা দেশের সবচেয়ে মেধাবী, বরেণ্য ও আলোকিত মানুষ। তাঁরা দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য তাঁদের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগান। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ‘দীর্ঘ নয় মাস ধরে অন্যান্য বাঙালির সঙ্গে এসব বুদ্ধিজীবীকেও নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। গোবিন্দচন্দ্র দেব, শহিদ সাবের, মুনীর চৌধুরীসহ অনেক বুদ্ধিজীবীকে পাকিস্তানি সেনারা হত্যা করে। বাঙালি জাতির মুক্তির জন্য তাঁরা সারা জীবন চেষ্টা করেছেন এবং জীবন দিয়েছেন। এ কারণে আমরা চিরদিন শহিদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণ করব।
ছ. কোন দিনটিকে ‘শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়? কেন?
উত্তর: ১৪ই ডিসেম্বর ‘শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়। এ দিনটিকে পালন করার কারণ: ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানি সেনারা এদেশের মেধাবী, বরেণ্য ও আলোকিত মানুষদের হত্যা করার ষড়যন্ত্র করে। যখন তারা বুঝতে পারে যে, তাদের পরাজয় নিশ্চিত, তখন তারা সে ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করে। সে কারণে পাকিস্তানি সেনারা ১৯৭১ সালের ১৪ই ডিসেম্বর অধ্যাপক, মুনীর চৌধুরী, মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, আনোয়ার পাশা, সন্তোষচন্দ্র ভট্টাচার্য, গিয়াসউদ্দিন আহম্মদ, লেখক-সাংবাদিক শহীদুল্লা কায়সার, সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেনসহ বহু বরেণ্য বাঙালিকে ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করে। এ হত্যার ফলে এদেশের অপূরণীয় ক্ষতি হয়। তাঁদের স্মরণে তাই প্রতি বছর ডিসেম্বর মাসের ১৪ তারিখ ‘শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস’ পালন করা হয়।
৪. বাম পাশের বাক্যের সাথে ডান পাশের ঠিক শব্দ মিলিয়ে পড়ি ও লিখি।
| বরণ করার যোগ্য | মেধাবী |
| মেধা আছে এমন যে জন | নিরহঙ্কার |
| অহঙ্কার নেই যার | বরণ্য |
| বিচার-বিবেচনা ছাড়া যা | অপুরণীয় |
| কোনোভাবেই পূরণ করা যায় না এমন | নির্বিচার |
উত্তর:
বরণ করার যোগ্য – বরেণ্য।
মেধা আছে এমন যে জন – মেধাবী।
অহংকার নেই যার -নিরহংকার।
বিচার-বিবেচনা ছাড়া যা – নির্বিচার।
কোনোভাবেই পূরণ করা যায় না এমন – অপূরণীয়।
৫. ঠিক উত্তরটিতে টিক (√) চিহ্ন দিই।
ক. কোন তারিখে পাকিস্তানি সেনারা ঢাকার নিরস্ত্র, ঘুমন্ত মানুষের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে?
১. ১৯৭১ সালের সাতাশে মার্চ
২. ১৯৭১ সালের পঁচিশে মার্চ √
৩. ১৯৭১ সালের উনত্রিশে মার্চ
৪. ১৯৭১ সালের ছাব্বিশে মার্চ
খ. প্রতিবছর ১৪ই ডিসেম্বর পালন করা হয়-
১. ‘স্বাধীনতা দিবস’ হিসেবে
২. ‘মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে
৩. ‘শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস’ হিসেবে √
৪. ‘বিজয় দিবস’ হিসেবে
গ. দেশ স্বাধীন হবার পর বুদ্ধিজীবীদের ক্ষত-বিক্ষত লাশ পাওয়া যায়
১. মিরপুর ও রায়ের বাজারের বধ্যভূমিতে √
২. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে
৩. ঢাকার বুড়িগঙ্গা নদীতে
৪. সংবাদপত্র অফিসে
৬. বিপরীত শব্দ জেনে নিই। ফাঁকা ঘরে ঠিক শব্দ বসিয়ে বাক্য তৈরি করি।
[ঘুমন্ত-জাগ্রত],[স্বাধীন-পরাধীন],[সাধু-অসাধু],[লোভী-নির্লোভ],[সরল-গরল]
ক.___অবস্থায় সংবাদ অফিসে শহিদ হন শহিদ সাবের।
খ. দেশ___হবার পরে অনেক বুদ্ধিজীবীর লাশ পাওয়া যায়।
গ. এদেশের কৃষক___জীবনযাপন করে।
ঘ. বাংলাদেশে অনেক___সন্ন্যাসী বাস করে।
ঙ. আলবদর বাহিনীর লোকেরা ছিল অসাধু ও___।
উত্তর:
ক. ঘুমন্ত অবস্থায় সংবাদ অফিসে শহিদ হন শহিদ সাবের।
খ. দেশ স্বাধীন হবার পরে অনেক বুদ্ধিজীবীর লাশ পাওয়া যায়।
গ. এদেশের কৃষক সরল জীবনযাপন করে।
ঘ. বাংলাদেশে অনেক সাধু সন্ন্যাসী বাস করে।
ঙ. আলবদর বাহিনীর লোকেরা ছিল অসাধু ও লোভী।
৭. ‘শহিদ বুদ্ধিজীবী’ সম্পর্কে আমার অনুভূতি লিখি।
উত্তর: শহিদ বুদ্ধিজীবী সম্পর্কে আমার অনুভূতি: বুদ্ধিজীবীরা একটি জাতির বিবেক। তাঁরা তাঁদের জ্ঞান, বিজ্ঞান ও দর্শন চিন্তা এবং কর্ম দিয়ে এদেশের কল্যাণ সাধন করেন। পাকিস্তানি সেনারা ১৯৭১ সালের পঁচিশে মার্চ থেকে শুরু করে বাঙালি বুদ্ধিজীবী হত্যা শুরু করে, তা চলে দেশ স্বাধীনের পূর্ব পর্যন্ত। জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা, সেলিনা পারভীন, শহীদুল্লা কায়সারের মতো অনেক গুণীজনকে হত্যা করা হয় এ সময়। বিশেষ করে ১৯৭১ সালের ১৪ই ডিসেম্বর পাকিস্তানি সেনারা হত্যা করে বহু বাঙালি বুদ্ধিজীবী, যাঁরা বেঁচে থাকলে এদেশের মানুষের অশেষ ‘উপকার হতো। এ কারণে ১৪ই ডিসেম্বর শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। মুক্তিযুদ্ধে শহিদ বুদ্ধিজীবীরা আমাদের গর্ব।
Codehorse Learn Free