সংকল্প পঞ্চম শ্রেণীর বাংলা প্রশ্ন উত্তর: কবিতার কিশোরটি বন্ধ ঘরে থাকতে চায় না। সে জগৎটাকে দেখতে চায়। কেমন করে যুগের পরিবর্তন ঘটেছে, কেমন করে মানুষ দেশ-দেশান্তরে ছুটে চলছে, কিসের নেশায় লাখে লাখে বীর মরণ-যন্ত্রণা হাসিমুখে বরণ করছে। কেমন করে মানুষ চন্দ্রলোকের অচিনপুরে যেতে চায়- কিশোর এসব রহস্য জানতে চায়। সে আর ঘরে বসে থাকবে না। সে নিজের সীমার বাঁধন কাটিয়ে বিশ্বজগৎ ঘুরে ঘুরে দেখবে, দশ দিকে ছুটে বেড়াবে, ভূগর্ভে প্রবেশ করবে, আবার মহাদেশ পাড়ি দেবে। কিশোর সমগ্র পৃথিবী হাতের মুঠোয় নিয়ে দেখতে চায়।
সংকল্প পঞ্চম শ্রেণীর বাংলা প্রশ্ন উত্তর:
১. কবিতাটির মূলভাব জেনে নিই।
অসীম বিশ্বকে জানার কৌতূহল মানুষের। কিশোরেরও তাই। সে জানতে চায় বিশ্বের সকল কিছুকে। আবিষ্কার করতে চায় অসীম আকাশের সকল অজানা রহস্যকে। সে বুঝতে চায় কেন মানুষ ছুটছে অসীমে, অতলে। বীরেরা কেন জীবনকে অনায়াসে বিপন্ন করে, কেন বরণ করে মৃত্যুকে। সে জানতে চায় দুঃসাহসীরা কেন উড়ছে। তাই কিশোর মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে, সে আর বদ্ধ ঘরে বসে থাকবে না। পৃথিবীটাকে সেও ঘুরে ঘুরে দেখবে।
২. শব্দগুলো পাঠ থেকে খুঁজে বের করি, অর্থ বলি এবং বাক্য তৈরি করে বলি ও লিখি।
সংকল্প, বন্ধ, যুগান্তর, দেশান্তর, বরণ, মরণ-যন্ত্রণা, চন্দ্রলোক, অচিনপুর, ফেড়ে;
উত্তর:
সংকল্প – তীব্র ইচ্ছা, প্রতিজ্ঞা।-ভালো কাজ করার জন্য সংকল্প থাকা দরকার।
বদ্ধ – বন্ধ।-বদ্ধ ঘরে আলো বাতাস ঢুকতে পারে না।
যুগান্তর – এক যুগের পর আরেক যুগ।-১২ বছরে এক যুগ হয়।
দেশান্তর – এক দেশ থেকে আরেক দেশ।-বড় হলে আমি দেশ-দেশান্তরে ঘুরে বেড়াব।
বরণ -কোনো কিছু সাদরে গ্রহণ।-আমরা বাংলা নতুন বছরকে বরণ করে নিই।
মরণ-যন্ত্রণা-কঠিন যন্ত্রণা।-যারা সাহসী তারা মরণ-যন্ত্রণাকে ভয় পায় না।
চন্দ্রলোক – চাঁদের দেশ।-মানুষ এখন চন্দ্রলোক ছাড়িয়ে মঙ্গল গ্রহেও যাত্রা করছেন।
অচিনপুর – অচেনা জায়গা।-এক ছিল অচিনপুরের রাজকন্যা।
ফেড়ে – চিরে, দুই ফাঁক করে।-কাঠুরে কুড়াল দিয়ে কাঠটা ফেড়ে ফেলল।
৩. শব্দগুলোর অর্থলিখি ও বাক্য তৈরি করি। একটি করে দেখানো হলো।
উত্তর:
সংকল্প: প্রতিজ্ঞা – ভালো কাজ করার জন্য সবাইকে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করা উচিত।
বদ্ধ: বন্ধ – সে বন্ধ জানালাটি খুলে দিল।
দেশান্তর: এক দেশ থেকে আরেক দেশ।-বড় হলে আমি দেশ-দেশান্তরে ঘুরে বেড়াব।
ইঙ্গিত: ইশারা – শিক্ষক ক্লাসে সবাইকে চুপ থাকতে ইশারা করলেন।
৪. নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর বলি ও লিখি।
ক. কবি বদ্ধ ঘরে থাকতে চান না কেন?
উত্তর: কবি জগৎটাকে দেখতে চান। এ জগতের মানুষ কীভাবে-যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে ঘুরছে, দেশ থেকে দেশান্তরে ছুটে বেড়াচ্ছে কবি এসব দেখতে চান। তাছাড়া মঙ্গলগ্রহ, চন্দ্রলোকের অচিনপুর, আকাশ, পাতাল এসবের রহস্য তিনি জানতে চান। এ কারণে তিনি বদ্ধ ঘরে থাকতে চান না।
খ. যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে মানুষ ঘুরছে বলতে কী বোঝ লেখ?
উত্তর: যুগ বলতে অনেক বছরের সমষ্টি বোঝায়। আর যুগান্তর বলতে বোঝায় এক যুগ থেকে অন্য যুগ। অর্থাৎ মানুষ কীভাবে বছরের পর বছর বিভিন্ন, দেশ ও স্থানে ঘুরছে সেটি বোঝাতেই যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকের কথা বলা হয়েছে।
গ. চন্দ্রলোকের অচিনপুরে কারা যেতে চায়?
উত্তর: দুঃসাহসী বিজ্ঞানী ও পর্যটকেরা চন্দ্রলোকের অচিনপুরে যেতে চায়। তারা সেখানকার অবস্থা ও পরিবেশ সম্পর্কে জানতে চায়, জ্ঞান অর্জন করতে চায়।
ঘ. কবি হাতের মুঠোয় পুরে কী এবং কেন দেখতে চান?
উত্তর: এই বিশ্বজগতে রয়েছে নানা রকম অজানা রহস্য। এখানে মানুষ যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে ঘুরছে, দেশ থেকে দেশান্তরে ছুটছে, নতুন নতুন বিষয় জানার জন্য অনেক কষ্ট সহ্য করছে, চন্দ্রলোকের অচিনপুরে যাচ্ছে, মঙ্গলগ্রহ থেকে উড়ে আসা কোনো সংকেত- এ সবই কবি জানতে চান। এসব অজানা রহস্য জানার কৌতূহল মেটানোর জন্যই কবি হাতের মুঠোয় পুরে বিশ্বজগৎ দেখতে চান।
৫. ক্রিয়াপদের সাধু ও চলিত রূপ শিখি।
চলিত রূপ – সাধু রূপ
আঁকব – আঁকিব
দেখব – দেখিব
ঘুরছে – ঘুরিতেছে
মরছে – মরিতেছে
ছুটছে – ছুটিতেছে
আসছে – আসিতেছে
চলছে – চলিতেছে
৬. ক্রিয়ার কাল সম্পর্কে জেনে নিই।
ক. আমি কাজটি করি।
আমি কাজটি করেছিলাম।
আমি কাজটি করব।
উপরের বাক্যগুলোতে ব্যবহৃত ‘করি’, ‘করেছিলাম’ ও ‘করব’-এগুলো ‘করা’ ক্রিয়াপদটির বিভিন্ন রূপ।
যে সময়ে ক্রিয়া বা কাজটি সম্পন্ন হয়, সেই সময়টিকেই ক্রিয়ার কাল বলা হয়।
যেমন বর্তমান কাল, অতীত কাল, ভবিষ্যৎ কাল।
খ.নিচের বাক্যের ক্রিয়াবাচক শব্দগুলোর নিচে দাগ দিই।
আমি বড় হয়ে মানুষের জন্য কাজ করতে চাই।
আমি আমার দক্ষতা অন্যের উপকারে ব্যবহার করি।
কামাল বর্ষাকালে তার গ্রামে গাছ লাগাবে।
তরুণ চিকিৎসক হবে। মানুষকে চিকিৎসা সেবা দেবে।
(গ) নিচের ভবিষ্যৎ কালবাচক ক্রিয়াপদগুলোকে বর্তমান ও অতীত কালবাচক ক্রিয়াপদে রূপান্তর করি।
থাকব, দেখব, শুনব, খাব, বেড়াব, ঘুরব, পড়ব, খেলব, চড়ব, নামব, ধরব, হাসব;
ভবিষ্যৎ | বর্তমান | অতীত |
---|---|---|
থাকব | থাকি | থেকেছিলাম |
দেখব | দেখি | দেখেছিলাম |
শুনব | শুনি | শুনেছিলাম |
খাব | খাই | খেয়েছিলাম |
বেড়াব | বেড়াই | বেড়িয়েছিলাম |
ঘুরব | ঘুরি | ঘুরেছিলাম |
পড়ব | পড়ি | পড়েছিলাম |
খেলব | খেলি | খেলেছিলাম |
চড়ব | চড়ি | চড়েছিলাম |
নামব | নামি | নেমেছিলাম |
ধরব | ধরি | ধরেছিলাম |
হাসব | হাসি | হেসেছিলাম |
৭. শব্দগুলোর বানান লিখি।
বরণ, মরণ, যন্ত্রণা (র-এর পরে ‘ণ’ বসে), বদ্ধ, যুগান্তর, দেশান্তর, বিশ্বজগৎ, ইঙ্গিত।
৮. কবির সংকল্পগুলো লিখি।
উত্তর: ‘সংকল্প’ কবিতায় কবি কাজী নজরুল ইসলাম নিচের সংকল্পগুলো করেছেন-
ক. কবি বন্ধ ঘরে থাকতে চান না।
খ. তিনি জগৎটাকে দেখতে চান।
গ. যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে মানুষ কীভাবে ঘুরছে তা তিনি জানতে চান।
ঘ. মানুষ দেশ-দেশান্তরে কীভাবে ছুটছে তা তিনি জানতে চান।
ঙ. কিসের আশায় লাখে লাখে বীর মারা যাচ্ছে এবং মরণ-যন্ত্রণা ভোগ করছে তা তিনি জানতে চান।
চ. চন্দ্রলোকের অচিনপুরে কে যেতে চায় তা তিনি জানতে চান।
ছ. তিনি মঙ্গলগ্রহের ইঙ্গিত শুনতে চান।
জ. কবি পাতাল ফেড়ে নামতে চান।
ঝ. তিনি আকাশ ফুঁড়ে উঠতে চান।
ঞ. কবি বিশ্বজগৎকে আপন হাতের মুঠোয় পুরে দেখবেন।
৯. আমার সংকল্পগুলো লিখি।
উত্তর: আমার সংকল্পগুলো হলো:
আমি ভালোভাবে লেখাপড়া করব।
মা-বাবার কথা শুনব।
বড়দের সম্মান করব।
অজানাকে জানব।
নতুন কিছু আবিষ্কার করার চেষ্টা করব।
মানুষের সেবা করব।
দেশকে ভালোবাসব।
একজন ভালো মানুষ হব।
১০. কবিতাটি আবৃত্তি করি ও মুখস্থ লিখি।
উত্তর: শ্রেণিশিক্ষকের সহায়তায় চেষ্টা কর।