বীরপুরুষ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রশ্ন উত্তর: শিশুরা কল্পনা করতে ভালোবাসে। আর মাকে নিয়েই শিশুর যত ভাবনা, চিন্তা ও কল্পনা। এমনই এক শিশু কল্পনা করছে, মাকে নিয়ে সে চলেছে দূর দেশে, মা আছেন পালকিতে বসে, আর সে যেন লাল একটা ঘোড়ায় চড়ে পালকির পাশাপাশি চলেছে। পালকি ক্রমে ক্রমে নির্জন স্থান জোড়াদিঘির মাঠে পৌছায়। হঠাৎ একদল ডাকাত আক্রমণ করে পালকি। সে তখন তলোয়ার নিয়ে ডাকাতদের আক্রমণ করে। কিছু ডাকাত মারা পড়ে, কিছু ডাকাত পালিয়ে যায়। পালকির বেহারারা ভয়ে পালিয়েছিল, তারা ফিরে আসে। খোকা বীরপুরুষের মতো মায়ের কাছে ফিরে আসে। মা তাকে কোলে নিয়ে চুমু খান আর বলেন, ‘ভাগ্যে খোকা সঙ্গে ছিল, কী দুর্দশাই হতো তা না হলে!’
বীরপুরুষ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রশ্ন উত্তর:
১. জেনে নিই।
শিশুরা কল্পনা করতে ভালোবাসে। এই কবিতাটিও তেমনি এক ছোট্ট শিশুর কল্পনা। কল্পনায় সে মায়ের সঙ্গে দূর দেশে যায়। পথে সে ডাকাতদের মোকাবেলা করে, বীরের মতো লড়াই করে মাকে রক্ষা করে।
২. শব্দগুলো পাঠ থেকে খুঁজে বের করি, অর্থ বলি এবং নতুন বাক্য লিখি।
টগবগিয়ে, রাঙা, পাট, জোড়াদিঘি, স্মরণ, বেয়ারা (বেহারা), থরথর, ঝনঝনিয়ে, দুর্দশা, সোঁতা;
উত্তর:
টগবগিয়ে – পানি ফোটার মতো শব্দ করে, ধাবমান ঘোড়ার পায়ের শব্দ করে। ঘোড়া টগবগিয়ে চলে।
রাঙা – রঙিন।- সন্ধ্যার আকাশ অনেকটা রাঙা দেখায়।
পাট – আকাশের পশ্চিম দিকের শেষভাগ, অস্তাচল, যেখানে সূর্য ডোবে।- সন্ধ্যা হলে সূর্য নামে পাটে।
জোড়াদিঘি – যেখানে পাশাপাশি দুটি দিঘি রয়েছে। বাংলাদেশের অনেক স্থানেই জোড়াদিঘি দেখা যায়।
স্মরণ – মনে করা।- ২১শে ফেব্রুয়ারি একটি স্মরণীয় দিন।
বেয়ারা (বেহারা)-যারা কাঁধে পালকি বহন করেন। বিয়েতে বেয়ারারা পালকিতে বর-কনে বহন করে চলেন।
থরথর – প্রচণ্ড কম্পন।- পৌষের শীতে বুড়ি থরোথরো কাঁপছে।
ঝনঝনিয়ে – ঝনঝন শব্দ করে। থালাবাসন ধুতে নিলে তা ঝনঝনিয়ে ওঠে।
দুর্দশা – খারাপ অবস্থা। ছেলেটি বেশ দুর্দশাগ্রস্ত। পড়াশুনা না করায়
সোঁতা – ক্ষীণ স্রোত বা প্রবাহ।- নদীতে ব্রিজ দিলে পানির গতি সোঁতা হয়ে পড়ে।
৩. প্রশ্নগুলোর উত্তর বলি ও লিখি।
প্রশ্ন ক. খোকা মাকে নিয়ে কোথায় যাচ্ছে?
উত্তর: খোকা মাকে নিয়ে অনেক দূরে বিদেশ ঘুরতে যাচ্ছে।
প্রশ্ন খ. মা ও খোকা কীভাবে যাচ্ছে?
উত্তর: মা যাচ্ছে পালকিতে চড়ে। দরজা দুটো একটুখানি ফাঁকা রেখে। আর খোকা যাচ্ছে রাঙা ঘোড়ায়। টগবগিয়ে মায়ের পাশে পাশে।
প্রশ্ন গ. তারা কখন জোড়াদিঘির ঘাটে পৌছাল? এমন সময় কী ঘটল?
উত্তর: তারা সন্ধ্যার সময় জোড়াদিঘির ঘাটে পৌছাল। এমন সময় একদল ডাকাত তাদের আক্রমণ করল। বেয়ারাগুলো ভয়ে পাশের কাঁটাবনে গিয়ে লুকায়। আর সাহসী খোকা একা ডাকাতের সঙ্গে লড়াই করে বিজয়ী হয়।
প্রশ্ন ঘ. বেয়ারারা কোথায় পালাল?
উত্তর: ডাকাতের ভয়ে বেয়ারারা পাশের কাঁটাবনে গিয়ে পালাল।
প্রশ্ন ঙ. ‘ভাগ্যে খোকা সঙ্গে ছিল’- মা একথা বললেন কেন?
উত্তর: খোকা তার মাকে নিয়ে দেশ-বিদেশ ঘুরতে বের হয়। সন্ধ্যা হলে তারা কোনো এক জোড়াদিঘির ঘাটে গিয়ে পৌছায়। এমন সময় একদল ডাকাত তাদের ওপর আক্রমণ করলে সাহসী খোকা একাই ডাকাতদের সঙ্গে যুদ্ধ করে জয়লাভ করে। তাই মা একথা বললেন।
প্রশ্ন চ. বীরপুরুষ কে? সে কাদের হারিয়ে বীরপুরুষ হলো?
উত্তর: ‘বীরপুরুষ’ কবিতার সাহসী খোকা বীরপুরুষ। সে তাদের ওপর আক্রমণকারী একদল ডাকাতকে হারিয়ে বীরপুরুষ হয়।
৪. নিচের শব্দগুলোর মধ্যে অর্থের পার্থক্য জেনে নিই ও শব্দ দিয়ে তৈরি বাক্যগুলো শুদ্ধ উচ্চারণে পড়ি।
কাটা – অঘ্রাণ মাসে ধান কাটা শেষ হয়েছে।
কাঁটা – চোরাকাঁটায় মাঠ ভরে আছে।
কোন – তুমি কোন কাজ করবে?
কোণ – ঘরের কোণে বসে থাকলে চলবে না, কাজে নেমে পড়ো।
৫. বিপরীত শব্দ জেনে নিই ও বাক্য তৈরি করি।
ভয় -সাহস, সাহসের কাছে সবাই পরাজিত হয়।
বিদেশ -স্বদেশ, সবার কাছেই স্বদেশপ্রীতি মহৎ গুণ।
দূরে -কাছে, মায়ের কাছে সব সন্তানই সমান।
সকাল -সন্ধ্যা, সন্ধ্যায় পাখিরা নীড়ে ফেরে।
আলো -আঁধার, অন্ধকার, অন্ধকারে সাবধানে পথ চলতে হয়।
৬. ‘বীরপুরুষ’ কবিতায় ‘ধু-ধু’ শব্দ আছে, এ রকম আরও শব্দের ব্যবহার জেনে নিই।
ধু-ধু – চারদিকে মানুষজন নেই, গ্রামটা যেন ধু-ধু করছে।
হু-হু – হু-হু করে হাওয়া বইছে।
সোঁ-সোঁ – সোঁ-সোঁ করে বাতাস ছুটছে।
ঝনঝন – কাচের আয়নাটা ঝনঝন করে ভেঙে গেল।
ভনভন – ময়লা জায়গাটায় ভনভন করে মাছি উড়ছে।
৭. কবিতাটি স্পষ্ট ও শুদ্ধ উচ্চারণে স্বাভাবিক গতিতে আবৃত্তি করি।
উত্তর: নিজে চেষ্টা কর।
৮. কর্ম-অনুশীলন।
আমি যদি বীরপুরুষ হতাম তাহলে কী করতাম তা লিখে জানাই।
উত্তর: যদি তুমি বীর পুরুষ হতে, তবে তুমি কী করতে বলে মনে কর তা-ই লিখে জানাও।