দুই তীরে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রশ্নোত্তর: বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। তাই নদীর সাথে মানুষের রয়েছে গভীর মিতালি। যে কারণে একই নদীর দুই তীরে দুজন মানুষ বাস করলেও তাদের ভালো লাগা যেন একই সুরে বেজে ওঠে। কেননা একজন ভালোবাসে নদীর বালুচর, শরৎকালের চকাচকির ঘর, কাশবন আর নদীতে ভেসে বেড়ানো হাঁস, নদীর তীরে কচ্ছপের রোদ পোহানো, জেলেদের ডিঙি বাওয়া ইত্যাদি। আবার অন্য তীরের অন্যজন ‘ভালোবাসে পাতায় ঘেরা ঘনচ্ছায়া বন। যেখান দিয়ে একটি রাস্তা এসে মিশেছে নদীর সাথে। সেখান দিয়ে নদীর ঘাটে সকাল-সাঁঝে গাঁয়ের বধূরা আসে। ছেলের দল ভেলা ভাসায় সেই নদীর জলে। এভাবেই দুই তীরের মানুষ নদীর সাথে মিতালি করেছে।
দুই তীরে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রশ্নোত্তর:
দুই তীরে
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
আমি ভালোবাসি আমার
নদীর বালুচর,
শরৎকালে যে নির্জনে
চকাচকির ঘর।
যেথায় ফুটে কাশ
তটের চারি পাশ,
শীতের দিনে বিদেশি সব
হাঁসের বসবাস।
কচ্ছপেরা ধীরে
রৌদ্র পোহায় তীরে,
দু-একখানি জেলের ডিঙি
সন্ধেবেলায় ভিড়ে।
তুমি ভালোবাস তোমার
ওই ও পারের বন,
যেথায় গাঁথা ঘনচ্ছায়া
পাতার আচ্ছাদন।
যেথায় বাঁকা গলি
নদীতে যায় চলি,
দুই ধারে তার বেণুবনের
শাখায় গলাগলি।
সকাল-সন্ধেবেলা
ঘাটে বধূর মেলা
ছেলের দলে ঘাটের জলে
ভাসে ভাসায় ভেলা।
…………………
১. কবিতার মূলভাব জেনে নিই।
একটি নদী, তার দুই তীরে দুজন মানুষ বাস করে। একজন ভালোবাসে তার নদীর বালুচর, শরৎকালে চকাচকিরা যেখানে ঘর বাঁধে। এর তীরে তীরে ফুটে থাকে কাশফুল। শীতের সময় হাঁসেরা এসে ভিড় করে, কচ্ছপ রোদ পোহায়। সন্ধ্যায় জেলের ডিঙি এসে ভিড়ে। অন্যজন ভালোবাসে বন, যার আছে ঘন ছায়া। সেখান থেকে একটা রাস্তা এসে মিশেছে নদীতে। নদীর ঘাটে বধূরা আসে, ছেলেরা জলে ভেলা ভাসায়। এই কবিতায় একটি নদী দুই তীরের মানুষকে সুন্দর করে মিলিয়ে দিয়েছে।
২. শব্দগুলো পাঠ থেকে খুঁজে বের করি। অর্থ বলি।
নির্জন, চকাচকি, তট, ডিঙি, আচ্ছাদন, বেণুবন;
উত্তর:
নির্জন – জনশূন্য স্থান।
চকাচকি – হাঁসজাতীয় পাখি।
তট – নদীর তীর।
ডিঙি – একধরনের নৌকা।
আচ্ছাদন – ঢাকনি, ছাউনি।
বেণুবন – বাঁশবাগান।
৩. ঘরের ভিতরের শব্দগুলো খালি জায়গায় বসিয়ে বাক্য তৈরি করি।
চকাচকি, আচ্ছাদন, তটে, বেণুবন, নির্জন, ডিঙি;
ক. এলাকাটি এত ___ যে গা ছমছম করে।
খ. নদীর ধারে ___ দল বেঁধে উড়ে বেড়ায়।
গ. গ্রামের ছোট ছোট নদীগুলো মানুষ ___ করে পার হয়।
ঘ. নদীর দু ___ প্রতিবছর মেলা বসে।
ঙ. নদী তীরের বটগাছটি বর্ষাকালে মানুষ ___ হিসাবে ব্যবহার করে।
চ. নদীর ধারে গজিয়ে ওঠা ___ বাতাসে দুলতে থাকে।
উত্তর:
ক. এলাকাটি এত নির্জন যে গা ছমছম করে।
খ. নদীর ধারে চকাচকিরা দল বেঁধে উড়ে বেড়ায়।
গ. গ্রামের ছোট ছোট নদীগুলো মানুষ ডিঙি করে পার হয়।
ঘ. নদীর দু তটে প্রতিবছর মেলা বসে।
ঙ. নদী তীরের বটগাছটি বর্ষাকালে মানুষ আচ্ছাদন হিসাবে ব্যবহার করে।
চ. নদীর ধারে গজিয়ে ওঠা বেণুবন বাতাসে দুলতে থাকে।
৪. নিচের কথাগুলো বুঝে নিই।
তুমি ভালোবাস তোমার
ওই ও পারের বন,
যেথায় গাঁথা ঘনচ্ছায়া
পাতার আচ্ছাদন।
উত্তর: একটি নদী তার দুটি তীর। নদীর ওই পারে একটি বন। পাতার আচ্ছাদনে সেখানে ঘন ছায়ার তৈরি হয়েছে। ওই পারে যে থাকে সে ওই বন ভালোবাসে।
৫. প্রশ্নগুলোর উত্তর বলি ও লিখি।
প্রশ্ন ক. নদীর বালুচরে কী ঘটে?
উত্তর: ‘দুই তীরে’ কবিতায় কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নদীর বালুচরে কী কী ঘটে তা তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন, নদীতীরে বালুচরে চকাচকি নির্জনে ঘর বাঁধে। তীরের চারপাশে কাশফুল ফুটে থাকে। শীতের সময় হাঁস এসে বালুচরে ভিড় করে। কচ্ছপ দল বেঁধে এসে রোদ পোহায়। সন্ধ্যায় জেলেদের ডিঙি এসে ঘাটে ভিড় করে।
প্রশ্ন খ. দুই তীরে দু-জন মানুষের ভালো লাগার জিনিসগুলো কী?
উত্তর: নদীর দুই তীরে দুজন মানুষ বাস করে। এক তীরের মানুষ ভালোবাসে নদীর বালুচর, শরৎকালে যেখানে নির্জনে চকাচকিরা ঘর বাঁধে। সে ভালোবাসে নদীতীরের কাশফুল, কচ্ছপের রোদ পোহানোর দৃশ্য, সন্ধ্যাবেলা দু-একটা জেলেডিঙির তীরে ফেরা। আর ওপারের মানুষ ভালোবাসে তার ওপারের বন, যেখানে পাতার আচ্ছাদনে ঘন ছায়া তৈরি হয়েছে। সে ভালোবাসে বেণুবন, সকাল-সন্ধ্যায় ঘাটে বধূদের আনোগোনা আর ঘাটের জলে ছেলের দলের ভেলা ভাসানো।
প্রশ্ন গ. ঘাটে বধূর মেলা বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: ‘দুই তীরে’ কবিতায় কবি বলেছেন যে, নদীর ঘাটে সকাল-সন্ধ্যা বধূদের মেলা। ‘ঘাটে বধূর মেলা’ কথাটি দ্বারা করি মূলত বলতে চেয়েছেন যে, গ্রামের বধূরা সকাল-সন্ধ্যা দল বেঁধে নদীর ঘাটে আসে। তারা নদীতে গোসল করে, কাপড়চোপড় ধোয়, নদী থেকে কলসি কাঁখে করে পানি নিয়ে যায়।
প্রশ্ন ঘ. ‘দুই তীরে’ কবিতায় ওই পারের বনটি কেমন?
উত্তর: ‘দুই তীরে’ কবিতায় কবি ওই পারের যে বনের কথা বলেছেন, তা গাছগাছালিতে পরিপূর্ণ। আর এই ঘন বন পাতার আচ্ছাদনে ঘনচ্ছায়া তৈরি করেছে।
প্রশ্ন ঙ. সকাল-সন্ধেবেলা ছেলের দল কী করে?
উত্তর: সকাল-সন্ধ্যায় ছেলের দল নদীর জলে ভেলা ভাসিয়ে তার ওপর তারা ভেসে থাকে।
৬. কবিতাটি আবৃত্তি করি।
উত্তর: কবিতাটি মুখস্থ করে আবৃত্তি কর।
৭. কর্ম-অনুশীলন।
শূন্যস্থানে কথা বসিয়ে একটি কবিতা বা ছড়া লেখার চেষ্টা করি।
উত্তর:
আসে পৌষ মাস,
হাওয়ায় দোলে বাঁশ।
নদীতে পড়ে চর,
হাঁসেরা বাঁধে ঘর।
উতলা হয় মন,
দেখে সবুজ বন।