চতুর্থ শ্রেণি মহীয়সী রোকেয়া প্রশ্ন উত্তর:
চতুর্থ শ্রেণি: মহীয়সী রোকেয়া

চতুর্থ শ্রেণি মহীয়সী রোকেয়া প্রশ্ন উত্তর

চতুর্থ শ্রেণি মহীয়সী রোকেয়া প্রশ্ন উত্তর: সে অনেক দিন আগের কথা। রংপুরের পায়রাবন্দ গ্রাম। সেই গ্রামেই জন্ম হলো এক ফুটফুটে শিশুর। নাম তার রোকেয়া। রোকেয়ার দুই বোন আর দুই ভাই। বাবা জমিদার। কিন্তু সেই জমিদারি তখন পড়তির দিকে। আগের অবস্থা আর নেই। সকালে রোকেয়ার ঘুম ভাঙে পাখির ডাকে। পাখিদের তো ডানা আছে। পাখিরা উড়তে পারে। যখন যেখানে খুশি যেতে পারে। কিন্তু রোকেয়ার কোথাও যাওয়ার অনুমতি নেই। ঘরের বাইরে তো দূরের কথা, কারো সামনে যাওয়াও নিষেধ।

চতুর্থ শ্রেণি মহীয়সী রোকেয়া প্রশ্ন উত্তর:

১. শব্দগুলো পাঠ থেকে খুঁজে বের করি, অর্থ বলি এবং বাক্য তৈরি করে লিখি।
জমিদার, বন্দি, চিলেকোঠা, স্নেহ, স্বাধীনতা, প্রতিষ্ঠা, লেখালেখি, উন্নতি, সমাজ, অধিকার, লড়াই, নারী জাগরণ, অগ্রদূত, মহীয়সী, চিরস্মরণীয়।
উত্তর:
জমিদার – ধনী ব্যক্তি, যিনি বহু জমি ও বিষয় সম্পত্তির মালিক। – রানার দাদা জমিদার ছিলেন।
বন্দি – আটক – বন্দি পাখি মুক্তি চায়।
চিলেকোঠা -বাড়ির ছাদে লাগোয়া ঘর। সিঁড়িঘর।-আমরা ছোটবেলায় চিলেকোঠায় খেলতাম।
স্নেহ -ভালোবাসা, প্রেম । প্রত্যেক মা-ই তার সন্তানকে পরম স্নেহে লালন-পালন করেন।
স্বাধীনতা -মুক্তি, নিজের ইচ্ছেমতো কিছু করতে পারা।- এক সাগর রক্তের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি।
প্রতিষ্ঠা -তৈরি।- বেগম রোকেয়া মেয়েদের শিক্ষার জন্য স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন।
লেখালেখি -লেখা, রচনা। বেগম রোকেয়া নারী অধিকার নিয়ে লেখালেখি করেছেন।
উন্নতি – কিছুটা খারাপ অবস্থা থেকে ভালো অবস্থায় যাওয়া। বর্তমানে নারীশিক্ষার বেশ উন্নতি হয়েছে।
সমাজ -আমাদের চারপাশের পরিবেশ, মানুষ।-একসময় আমাদের সমাজে নারীদের শিক্ষার কোনো সুযোগ ছিল না।
অধিকার – দাবি, পাওনা জিনিসের ওপর দখল নেওয়া। – শিক্ষা শিশুর অধিকার।
লড়াই – যুদ্ধ, সংগ্রাম। – বাঙালি লড়াই করে ভাষার দাবি প্রতিষ্ঠা করেছে।
নারী জাগরণ – অধিকার সম্পর্কে মেয়েদের সচেতন করে তোলা। – বেগম রোকেয়া নারী জাগরণের অগ্রদূত।
অগ্রদূত – যিনি পথ দেখান, সবার আগে আগে চলেন। – কোকিলকে বসন্তের অগ্রদূত বলা হয়।
মহীয়সী – মহান যে নারী। – সুফিয়া কামাল ছিলেন এক মহীয়সী নারী।
চিরস্মরণীয় – সব সময় যাকে মানুষ স্মরণ করে, মনে রাখে। – বীরশ্রেষ্ঠরা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

২. নিচের শব্দগুলো দিয়ে বাক্য লিখি।
অগ্রদূত, অধিকার, প্রতিষ্ঠা, অদম্য, অবরোধ।
উত্তর:
অগ্রদূত – বেগম রোকেয়া নারী জাগরণের অগ্রদূত।
অধিকার – শিক্ষিত মেয়ে অধিকার সচেতন হয়।
প্রতিষ্ঠা – বেগম রোকেয়া মেয়েদের জন্য স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন।
অদম্য – বাঙালিরা অদম্য সাহস নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
অবরোধ – এক সময় আমাদের সমাজে অবরোধ প্রথার প্রচলন ছিল।

৩. এককথায় প্রকাশ করি।
এই লেখায় “রোকেয়ার পড়ালেখা করার কী অদম্য আগ্রহ!” এরকম একটা বাক্য রয়েছে। এই বাক্যে ব্যবহৃত ‘অদম্য’ শব্দটির অর্থ হচ্ছে, ‘যে কোনো কিছুতে দমে না।’ শব্দটি একটি বাক্যাংশের সংক্ষিপ্ত রূপ। এরকম আরও কিছু শব্দ শিখি।
অনেকের মধ্যে -অন্যতম।
জানার ইচ্ছা -জিজ্ঞাসা।
আকাশে যে চরে -খেচর।
বিদ্যা আছে যার -বিদ্বান।
ভাতের অভাব যার -হাভাতে।
মহান যে নারী -মহীয়সী।

৪. যুক্তবর্ণগুলো দেখি ও যুক্তবর্ণ দিয়ে গঠিত শব্দগুলো পড়ি ও লিখি।
জ্ঞান – জ্ঞ = জ্ + ঞ ; জ্ঞান, বিজ্ঞান, অজ্ঞান।
ন্নতি – ন্ন = ন্ + ন ; অন্ন, ভিন্ন, নবান্ন।

৬. বাম পাশের শব্দাংশের সাথে ডান পাশের ঠিক শব্দাংশ মিলিয়ে পড়ি।
রংপুরের পায়রাবন্দ গ্রামে → ষোলো বছর বয়সে।
অবরোধ মানে বাড়ির নির্দিষ্ট → মতিচুর, অবরোধবাসিনী ও পদ্মরাগ।
রাত গভীর হলে ভাইয়ের কাছে → রোকেয়ার জন্ম।
রোকেয়ার বিয়ে হলো → নারী জাগরণের অগ্রদূত।
তাঁর লেখা বইগুলো হলো- → শুরু হতো তার জ্ঞানার্জন।
মহীয়সী রোকেয়া → গণ্ডির মধ্যে আটকা থাকা।
উত্তর:
রংপুরের পায়রাবন্দ গ্রামে → রোকেয়ার জন্ম।
অবরোধ মানে বাড়ির নির্দিষ্ট → গণ্ডির মধ্যে আটকা থাকা।
রাত গভীর হলে ভাইয়ের → শুরু হতো তার জ্ঞানার্জন।
রোকেয়ার বিয়ে হলো → ষোলো বছর বয়সে।
তাঁর লেখা বইগুলো হলো- → মতিচুর, অবরোধবাসিনী ও পদ্মরাগ।
মহীয়সী রোকেয়া → নারী জাগরণের অগ্রদূত।

৬. নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর বলি ও লিখি।
উত্তর: 
প্রশ্ন ক. বেগম রোকেয়া কোথায় জন্মগ্রহণ করেন?
উত্তর: বেগম রোকেয়া রংপুরের পায়রাবন্দ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
প্রশ্ন খ. বাড়িতে লোক এলে রোকেয়া কোথায় কোথায় লুকিয়ে থাকতেন?
উত্তর: বাড়িতে লোক এলে রোকেয়া কখনো চিলেকোঠায়, কখনো সিঁড়ির নিচে, কখনো দরজার আড়ালে লুকিয়ে থাকতেন।
প্রশ্ন গ. লেখাপড়ার বিষয়ে রোকেয়াকে কে কে সাহায্য করতেন?
উত্তর: লেখাপড়ার বিষয়ে রোকেয়াকে তাঁর বড় ভাই ইব্রাহিম সাবের ও বড় বোন করিমুন্নেসা সাহায্য করতেন।
প্রশ্ন ঘ. রোকেয়া কখন পড়াশোনা করতেন? কীভাবে করতেন?
উত্তর: বাবা-মা যখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন থাকতেন তখন বড় ভাই ইব্রাহিম সাবেরের কাছে বেগম রোকেয়া পড়তে বসতেন। রাতের পর রাত এভাবেই কেটে গেছে তাদের। কখনো পড়তে পড়তে ভোরও হয়ে গেছে। এভাবেই লুকিয়ে লুকিয়ে কষ্ট করে রোকেয়া পড়াশোনা শিখেছেন।
প্রশ্ন ঙ. সেকালে মেয়েদের অবস্থা কেমন ছিল?
উত্তর: বেগম রোকেয়া যখন জন্মগ্রহণ করেন তখনকার বাঙালি মুসলমান সমাজে মেয়েদের শিক্ষাদীক্ষা গ্রহণ করা কিংবা ঘরের বাইরে বের হওয়ার কোনো সুযোগ ছিল না। সারাক্ষণই চার দেয়ালের মধ্যে বন্দি থাকতে হতো। তখন কোরান পড়া ছাড়া আর কোনো পড়াশুনা তাদের করতে দেওয়া হতো না। আর অল্প বয়সেই মেয়েদের বিয়ে দেওয়া হতো। তাদের নিজেদের মতামত প্রকাশের কোনো সুযোগ দেওয়া হতো না। এমনই অসহায় ও করুণ অবস্থা ছিল সেকালে মেয়েদের।
প্রশ্ন চ. রোকেয়াকে কেন নারী জাগরণের অগ্রদূত বলা হয়?
উত্তর: সমাজে প্রচলিত প্রথা অগ্রাহ্য করে বেগম রোকেয়া পড়ালেখা শিখেছেন। রাতভর কষ্ট করে লুকিয়ে লুকিয়ে বড় ভাই-বোনের সঙ্গে জ্ঞানচর্চা করেছেন। নারীদের শিক্ষার জন্য এবং তাদের অধিকার আদায়ের জন্য লড়াই করেছেন। নারীদেরকে তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করার জন্য তিনি লেখালেখি করেছেন। নিজে নারীদের শিক্ষার জন্য প্রাথমিক স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছেন। নারী অধিকার ও নারীদের শিক্ষিত করতে তিনি যা করেছেন তাঁর আগে আর কেউ করেননি। এ কারণে বেগম রোকেয়াকে নারী জাগরণের অগ্রদূত বলা হয়।
প্রশ্ন ছ. নারীশিক্ষা কেন প্রয়োজন। বুঝিয়ে বলি।
উত্তর: দেশ, জাতি ও সমাজের উন্নতির জন্য নারী-পুরুষ উভয়েরই শিক্ষিত হওয়া প্রয়োজন। দেশ গড়ার কাজে শুধু পুরুষ নয়, নারীরও প্রয়োজন রয়েছে। বেগম রোকেয়া বলেছেন, একটা গাড়ি চলতে হলে দুটি চাকাকেই সমান হতে হয়। একটি ছোট আরেকটি বড় হলে সেই গাড়ি চলবে না। তেমনি ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা যদি পিছিয়ে থাকে তবে সেই সমাজের কোনোদিনই উন্নতি হতে পারে না। তাছাড়া সন্তানদের শিক্ষাদান ও লালন-পালনের জন্য মাকেও যথার্থ শিক্ষিত হওয়া জরুরি। এ জন্যই নারীশিক্ষা একান্ত প্রয়োজন।

৭. স্বামীর মৃত্যুর পর রোকেয়া কী কী কাজ করতে শুরু করলেন তা সংক্ষেপে লিখি।
উত্তর: বেগম রোকেয়া যে সময় জন্মগ্রহণ করেন তখন আমাদের সমাজে মেয়েদের চার দেয়ালে বন্দি করে রাখা হতো। কোরান পড়া ছাড়া আর কোনো পড়া শেখানো হতো না। অল্প বয়সেই মেয়েদের বিয়ে দেওয়া হতো। বেগম রোকেয়াকেও মাত্র ষোলো বছর বয়সে বিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু বিয়ের দশ বছর না পেরুতেই তাঁর ‘স্বামী মারা যান। স্বামীহীন রোকেয়া তাঁর রেখে যাওয়া অর্থ দিয়ে মেয়েদের শিক্ষার জন্য একটি প্রাথমিক স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। মেয়েদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করার জন্য তিনি বেশ কয়েকটি বই লেখেন। তিনিই প্রথম মেয়েদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করেন।

৮. রোকেয়ার জীবনী থেকে আমি কী শিখলাম তা সংক্ষেপে লিখি।
উত্তর: রোকেয়ার জীবনী থেকে আমি যা যা শিখলাম-
⇒ দৃঢ় প্রতিজ্ঞা থাকলে অনেক কঠিন কাজেও সফল হওয়া যায়।
⇒ নারী পুরুষ সবার জন্যই লেখাপড়া শেখা অত্যন্ত জরুরি।
⇒ সমাজে নারী ও পুরুষের সমান অধিকার রয়েছে।
⇒ সমাজের উন্নতির জন্য নারীর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

অতিরিক্ত প্রশ্ন ও উত্তর

১. এক কথায় প্রকাশ কর।
সমাজের উঁচুতে যার অবস্থান; যার সঙ্গে আত্মিক সম্পর্ক; রান্না করার ঘর; বয়সে সবচেয়ে বড় যে; সব সময় মানুষ যাকে স্মরণ করে; বাড়ির ছাদে লাগোয়া ঘর; যিনি সবার আগে আগে চলেন।
উত্তর:
সমাজের উঁচুতে যার অবস্থান – বনেদি;
যার সঙ্গে আত্মিক সম্পর্ক – আত্মীয়;
রান্না কুরার ঘর – রান্নাঘর;
বয়সে সবচেয়ে বড় যে – জ্যেষ্ঠ;
সব সময় মানুষ যাকে স্মরণ করে – চিরস্মরণীয়;
বাড়ির ছাদে লাগোয়া ঘর – চিলেকোঠা;
যিনি সবার আগে আগে চলেন – অগ্রদূত।

২. নিচের বাক্যগুলোর দাগ দেওয়া শব্দের বিপরীত শব্দ লেখ।
(ক) সে অনেক দিন আগের কথা।
(খ) রংপুরের পায়রাবন্দ গ্রাম
(গ) সেই গ্রামেই জন্ম নিল এক ফুটফুটে শিশু।
(ঘ) রোকেয়ার সকালে ঘুম ভাঙে পাখির ডাকে।
(ঙ) যখন যেখানে খুশি সে যেতে পারে।
(চ) এমনকি সে যদি মেয়ে হয়, তার সামনেও নয়।
(ছ) সেই সমাজের কোনোদিন উন্নতি হতে পারে না।
উত্তর:
(ক) পরের;
(খ) শহর;
(গ) মৃত্যু;
(ঘ) বিকালে;
(ঙ) আসতে;
(চ) ছেলে;
(ছ) অবনতি।

আরও পড়ুন: চতুর্থ শ্রেণি-বীরশ্রেষ্ঠর বীরগাথা প্রশ্ন উত্তর

আরও পড়ুন: চতুর্থ শ্রেণি বাংলা নেমন্তন্ন প্রশ্ন উত্তর

Codehorse App

Check Also

পাহাড়পুর রচনা চতুর্থ শ্রেণি (PDF)

পাহাড়পুর রচনা চতুর্থ শ্রেণি (PDF)

পাহাড়পুর রচনা চতুর্থ শ্রেণি (PDF): প্রিয় চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা, আজ আমরা সুন্দর একটি রচনা লিখব …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *