চতুর্থ শ্রেণি-বীরশ্রেষ্ঠর বীরগাথা প্রশ্ন উত্তর
চতুর্থ শ্রেণি: বীরশ্রেষ্ঠর বীরগাথা

চতুর্থ শ্রেণি-বীরশ্রেষ্ঠর বীরগাথা প্রশ্ন উত্তর

চতুর্থ শ্রেণি-বীরশ্রেষ্ঠর বীরগাথা প্রশ্ন উত্তর: রচনাটিতে মূলত তিনজন বীরশ্রেষ্ঠের স্বাধীনতা যুদ্ধে অসামান্য অবদানের কথা তুলে ধরা হয়েছে। তাঁরা তিনজন হলেন- ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর, মতিউর রহমান এবং হামিদুর রহমান। এদেশের স্বাধীনতার জন্য তাঁরা নিজের জীবনকে তুচ্ছ করে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তাঁরা তিনজনই স্বাধীনতা যুদ্ধে শহিদ হন। স্বাধীনতা যুদ্ধে অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাঁদেরকে বীরশ্রেষ্ঠ উপাধিতে ভূষিত করেছেন।

চতুর্থ শ্রেণি-বীরশ্রেষ্ঠর বীরগাথা প্রশ্ন উত্তর:

১. শব্দগুলো পাঠ থেকে খুঁজে বের করি, অর্থ বলি এবং বাক্য তৈরি করে লিখি।
বীরশ্রেষ্ঠ, বাঙ্কার, বীরগাথা, ধূলিসাৎ, রণক্ষেত্র, মুক্তিবাহিনী, নিয়ন্ত্রণ, অতিক্রম, বিধ্বস্ত হওয়া, দুঃসাহসিক, বিস্ফোরণ, মেশিনগান, অকুতোভয়।
উত্তর:
বীরশ্রেষ্ঠ: মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বের জন্য যারা সর্বশ্রেষ্ঠ। – বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান আমাদের শ্রদ্ধার পাত্র।
বাঙ্কার: যুদ্ধের জন্য তৈরি করা মাটির গর্ত। যুদ্ধের সময় সৈনিকেরা এখানে আশ্রয় নিয়ে তাদের এলাকা পাহারা দেন ও যুদ্ধ করেন। – শত্রুরা বাঙ্কারে আশ্রয় নিল।
বীরগাথা: বীরের গল্প। – মুক্তিযোদ্ধাদের বীরগাথা চিরস্মরণীয়।
ধূলিসাৎ: চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে মাটির সঙ্গে মিশে যাওয়া। – পাক সেনাদের বাঙ্কার ধূলিসাৎ হয়ে গেল।
রণক্ষেত্র: যুদ্ধের স্থান। – রণক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হয়।
মুক্তিবাহিনী: বাংলাদেশের মুক্তি ও স্বাধীনতার জন্য যাঁরা যুদ্ধ করেছেন তাঁদের বাহিনী। – মুক্তিবাহিনী পাক সেনাদের হটিয়ে দিল।
নিয়ন্ত্রণ: নিজের আয়ত্তে আনা। – মতিউর বিমানটিকে নিজের নিয়ন্ত্রণে নিলেন।
অতিক্রম: কোনো কিছু পার হওয়া বা ছাড়িয়ে যাওয়া। – মিঠু দৌড়ে ১০০ মিটার অতিক্রম করল।
বিধ্বস্ত হওয়া: ভেঙেচুরে যাওয়া। ধ্বংস হওয়া। – মতিউরের বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছিল।
দুঃসাহসিক: অত্যন্ত সাহসের কাজ। – হামিদুরের দুঃসাহসিক ভ‚মিকা চিরস্মরণীয়।
বিস্ফোরণ: চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে ফেটে পড়া। – হঠাৎ বোমার বিস্ফোরণ ঘটল।
মেশিনগান: যুদ্ধে ব্যবহৃত বন্দুকের মতো অস্ত্র। – যোদ্ধারা মেশিনগান ব্যবহার করেন।
অকুতোভয়: ভয় নেই যার। – মহিউদ্দিন ছিলেন অকুতোভয় এক যোদ্ধা।

২. প্রশ্নগুলোর উত্তর বলি ও লিখি।

(ক) বীরশ্রেষ্ঠরা কেন মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন?

উত্তর: পৃথিবীর সকল মানুষই স্বাধীনতাপ্রিয়। অথচ আমাদের সোনার বাংলা এক সময় ছিল পরাধীন। পাকিস্তানি শোষকরা এদেশ শাসন করতো। অবশেষে ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। সকল প্রকার শৃংখল থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য, স্বাধীন একটি দেশ পাওয়ার জন্য এদেশের আপামর জনতা তাঁদের জীবন বাজি রেখে অংশ নেয় স্বাধীনতা যুদ্ধে। বীরশ্রেষ্ঠরাও ছিলেন এদেশের এক একটা বীর সন্তান। তাঁরাও সেদিন বাংলাদেশকে শত্র“মুক্ত করার জন্য, স্বাধীন বাংলাদেশ গড়ার জন্য মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে জীবন দিয়েছিলেন।

(খ) মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর কীভাবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন- বর্ণনা কর।

উত্তর: শেষ রাত, তখনও ভোরের আলো ফোটেনি। মহানন্দা পাড়ি দিয়ে শত্রুশিবিরের দিকে ক্রলিং করে এগিয়ে যাচ্ছেন এক তরুণ। কাছাকাছি গিয়ে শত্রুর বাঙ্কার লক্ষ্য করে ছুড়লেন একটা গ্রেনেড। মুহূর্তের মধ্যে ধূলিসাৎ হয়ে গেল ঐ বাঙ্কার। কিন্তু অন্য বাঙ্কার থেকে একটা গুলি এসে লাগলো তার দেহে। তিনি শহীদ হলেন। বীরের রক্তে রঞ্জিত হলো বাংলাদেশের মাটি। স্বাধীনতার জন্যে এভাবেই সেদিন অসীম সাহসের সঙ্গে লড়াই করেছিলেন ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর।

(গ) যুদ্ধবিমানের নিয়ন্ত্রণ নিতে গেলে মতিউরের জীবনে কী ঘটেছিল?

উত্তর: মতিউর রহমান ছিলেন পাকিস্তান বিমান বাহিনীর ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট। তিনি চেয়েছিলেন পাকিস্তান থেকে যুদ্ধবিমান নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিতে। ১৯৭১ সালের ২০শে আগস্ট। করাচির মাশরুর বিমানঘাঁটি থেকে টি-৩৩ বিমান নিয়ে প্রশিক্ষণ শুরু করলেন। সঙ্গে পাকিস্তানি বৈমানিক মিনহাজ রশিদ। বিমানটি তখন শূন্যে, আকাশপথে। মতিউর পরিকল্পনা অনুসারে নিজেই বিমানটির নিয়ন্ত্রণ নিতে চাইলেন। বিমানটি কব্জা করা নিয়ে মিনহাজের সঙ্গে বিমানের মধ্যেই ধস্তাধস্তি হলো। বিমানটি খাট্টায় বিধ্বস্ত হলো। সেখানেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল মতিউরের প্রাণহীন দেহ। অর্থাৎ যুদ্ধবিমান নিয়ন্ত্রণ নিতে গিয়ে মতিউর রহমান শহীদ হলেন।

(ঘ) বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান যে অসীম সাহসের সঙ্গে যুদ্ধ করেছিলেন তা বর্ণনা দাও।

উত্তর: ১৯৭১ সালের ২৮ শে অক্টোবর। শ্রীমঙ্গল থানার ধলাই সীমান্ত ফাঁড়ি দখলের নেতৃত্ব দেন সিপাই হামিদুর রহমান। তিন প্লাটুন সৈনিক নিয়ে যাত্রা শুরু করেন। রাতের আধারে সন্তর্পনে এগিয়ে যেতে থাকলেন শত্রু শিবিরের দিকে। একেবারে কাছে এসে গেছেন। গ্রেনেড ছুঁড়ে শত্রুর বাঙ্কার নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার অপেক্ষা মাত্র। কিন্তু তখনই মাটিতে পেতে রাখা একটা মাইন বিস্ফোরিত হলে পাকিস্তানি সৈন্যরা সতর্ক হয়ে যায়। দুই পক্ষে বেধে যায় তুমুল যুদ্ধ। হামিদুর লক্ষ্য করলেন দুজন শত্রুসেনা এলএমজি থেকে মুহুর্মুহু গুলি ছুঁড়ছে। মুক্তিযোদ্ধারা এজন্য এগুতে পারছেন না। হামিদুর নিঃশব্দে ক্রলিং করে সেই দিকে এগিয়ে গেলেন। সঙ্গে একটা রাইফেল এবং দুটো গ্রেনেড। নির্ভুল নিশানায় প্রথম গ্রেনেডটা ছুড়লেন হামিদুর। দ্বিতীয় গ্রেনেডটাও ঠিক লক্ষ্যেই বিস্ফোরিত হলো। শত্রুর আক্রমণকে স্তব্ধ করে দিলেন তিনি। মুক্তিযোদ্ধারা দখল করে নিল ঐ ঘাঁটি। কিন্তু দ্বিতীয় গ্রেনেডটা ছোঁড়ার মুহূর্তে শত্রুর মেশিনগানের গুলি এসে লাগলো তার গায়ে। শহীদ হলেন এই অকুতোভয় বীর।

(ঙ) এক মহান বীরগাথার রচয়িতা তাঁরা – ব্যাখা করি।
উত্তর: দেশের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য নিজেদের প্রাণের মায়া ত্যাগ করে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে সিপাহি হামিদুর রহমান, ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর এবং মতিউর রহমান অসাধারণ বীরত্বের পরিচয় দিয়েছেন। তাদের বীরত্বের কারণেই শত্রুরা পর্যুদস্ত হয়েছে। আমরা পেয়েছি স্বাধীন বাংলাদেশ। দেশের জন্য নিজেদের জীবন বিলিয়ে দিয়ে তারা আত্মত্যাগের মহান দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করে গেছেন। তাই তাদের বলা যায় মহান বীরগাথার রচয়িতা।

চতুর্থ শ্রেণি-বীরশ্রেষ্ঠর বীরগাথা প্রশ্ন উত্তর:

৩. তারিখবাচক শব্দ শিখি।

লেখাটিতে আছে ‘১৯৫২ সালের ২রা ফেব্রুয়ারি’- এখানে ব্যবহৃত ‘২রা’ শব্দটি হলো তারিখবাচক শব্দ। এরকম ১০ পর্যন্ত বলতে ও লিখতে হয় এইভাবে:
১লা (পহেলা) – ৬ই (ছয়ই)
২রা (দোসরা) – ৭ই (সাতই)
৩রা (তেসরা) – ৮ই (আটই)
৪ঠা (চৌঠা) – ৯ই (নয়ই)
৫ই (পাঁচই) – ১০ই (দশই)

৪. ঠিক উত্তরটিতে টিক (√) চিহ্ন দিই।

ক) বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে জীবন উৎসর্গকারী বীরশ্রেষ্ঠ কত জন?
১. ৩ জন            ২. ৫ জন
৩. ৭ জন√        ৪. ৯ জন

খ) বীরশ্রেষ্ঠ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর কীভাবে যুদ্ধ করেছিলেন?
১. মেশিনগান থেকে গুলি ছুড়েছিলেন
২. ট্যাংক নিয়ে অগ্রসর হয়েছিলেন
৩. পাকিস্তানি সেনাদের বাঙ্কারে আক্রমণ চালিয়েছিলেন
৪. বিমান থেকে আক্রমণ করেছিলেন।
গ) মতিউর রহমানের বিমানটি কোথায় বিধ্বস্ত হয়েছিল?
১. ভারতের শ্রীনগরে
২. পাকিস্তানের থাট্টায়
৩. বাংলাদেশের মেহেরপুরে
৪. ভারতের ত্রিপুরায়
ঘ) কমলগঞ্জ থানার ধলই সীমান্ত ফাঁড়িটি দখলের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন কে?
১. হামিদুর রহমান √
২. মতিউর রহমান
৩. মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর
৪. মোস্তফা কামাল
৫. বড়দের কাছ থেকে মুক্তিযুদ্ধের ঘটনা জানার চেষ্টা করি ও তা শুনে এসে বন্ধুদের কাছে বলি।
উত্তর: নিজে চেষ্টা করো।
৬. নিচের ছবিটি অবলম্বনে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে আমার ভাবনা লিখে জানাই।
উত্তর: ছবিটি দেখে আমার ভেতরে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে যে ভাবনা আসে, তা হলো দেশকে স্বাধীন করার জন্য গরিব, ধনী, ছোট, বড়, কৃষক, জেলে, কামার, কুমার, শিক্ষিত, অশিক্ষিত, হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছে এবং দেশকে স্বাধীন করে বাংলার লাল-সবুজ পতাকা নিয়ে বিজয় উল্লাসে মেতে উঠেছে।

অতিরিক্ত সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর:

১। মুক্তিযুদ্ধের বীর শহিদদের কথা আমাদের জানতে হবে কেন?
উত্তর:হাজার হাজার শহিদ মুক্তিযোদ্ধা আছেন আমাদের জানার বাইরে। তাঁদের মধ্যে যেমন ছিল দেশপ্রেম, তেমন ছিল দুঃখ কষ্ট। আর তেমনই ছিল গৌরবের চেতনা। তা আমাদেরকে জানার জন্য তাঁদের কথা জানতে হবে।
২। হামিদুর রহমান কোন এলাকায় যুদ্ধ করার সময় কীভাবে শহিদ হলেন?
উত্তর: হামিদুর রহমান সিলেট জেলার শ্রীমঙ্গলের ধুলাই এলাকায় যুদ্ধ করছিলেন। ২৮শে অক্টোবর শত্রু ঘাঁটিতে আক্রমণ করতে গিয়ে তিনি বুলেট বিদ্ধ হন এবং শহিদ হন।
৩। মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ উপাধি কী?
উত্তর: মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ উপাধি হলো ‘বীরশ্রেষ্ঠ’।
৪। মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য যে যে উপাধি প্রদান করেছে- সেগুলো ক্রম অনুযায়ী লেখ।
উত্তর:মুক্তিযুদ্ধের অবদানের জন্য সরকার বীরশ্রেষ্ঠ, বীরউত্তম, বীরবিক্রম, বীরপ্রতীক উপাধি প্রদান করেছে।
৫। মতিউর কত বছর পাকিস্তানের মাটিতে সমাহিত ছিলেন?
উত্তর: মতিউর তিরিশ বছর পাকিস্তানের মাটিতে সমাহিত ছিলেন।
৬। ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরকে শিক্ষকরা ভালোবাসতেন কেন?
উত্তর:মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর মেধাবী ছাত্র ছিলেন। তাছাড়া তিনি মনোযোগ দিয়ে লেখাপড়া করতেন। এজন্য তাঁকে শিক্ষকেরা খুব ভালোবাসতেন।
Codehorse App

Check Also

পাহাড়পুর রচনা চতুর্থ শ্রেণি (PDF)

পাহাড়পুর রচনা চতুর্থ শ্রেণি (PDF)

পাহাড়পুর রচনা চতুর্থ শ্রেণি (PDF): প্রিয় চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা, আজ আমরা সুন্দর একটি রচনা লিখব …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *