৫ম শ্রেণি বিজ্ঞান প্রশ্ন উত্তর
৫ম শ্রেণি - বিজ্ঞান প্রশ্ন উত্তর

৫ম শ্রেণির বিজ্ঞান আবহাওয়া ও জলবায়ু প্রশ্নোত্তর

৫ম শ্রেণির বিজ্ঞান আবহাওয়া ও জলবায়ু প্রশ্নোত্তর: আমরা কোন কাপড় পরব বা কী করব তা ঐ দিনের আবহাওয়া দেখে ঠিক করি। আবার জলবায়ুর ধারণা কাজে লাগিয়ে কখন কোন ফসল চাষ করব তা ঠিক করতে পারি।

আবহাওয়া:

আবহাওয়া হলো কোনো নির্দিষ্ট সময়ে কোনো নির্দিষ্ট স্থানের আকাশ ও বায়ুমণ্ডলের সাময়িক অবস্থা। এই জন্যই দেশের বিভিন্ন স্থানের আবহাওয়া দিনের বিভিন্ন সময় ভিন্ন হয়। কোন দিন কোন কাপড় পরব এবং ছুটির দিন কী করব তা ঠিক করতে আমরা আবহাওয়ার পূর্বাভাস ব্যবহার করতে পারি।

জলবায়ু:

জলবায়ু হলো কোনো স্থানের বহু বছরের আবহাওয়ার গড় অবস্থা। তাই বছরের কোনো সময়ের আবহাওয়া কেমন হতে পারে তা আমরা পূর্ব অভিজ্ঞতা ও জলবায়ুর ধারণা থেকে অনুমান করতে পারি। যদিও আমাদের অনুমান সব সময় সঠিক নাও হতে পারে। কারণ আবহাওয়া সবসময় পরিবর্তনশীল।

আবহাওয়া ও জলবায়ুর মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। তবে আবহাওয়া ও জলবায়ু এক নয়। আবহাওয়া হলো কোনো স্থানের আকাশ ও বায়ুমণ্ডলের সাময়িক অবস্থা। আর জলবায়ু হলো কোনো স্থানের বহু বছরের আবহাওয়ার সামগ্রিক অবস্থা। বাংলাদেশের জলবায়ু অনুযায়ী বর্ষা শুরু হয় জুনের মাঝামাঝি (আষাঢ়ের শুরু) এবং শেষ হয় আগস্ট (শ্রাবণ-ভাদ্র) মাসে। বর্ষায় বৃষ্টি শুরুর সময় প্রতি বছরই পরিবর্তিত হয়। তবে বর্ষা ঋতু শুরু হওয়ার সম্ভাব্য সময়টি আমরা জানি জলবায়ুর ধারণা থেকে।


বায়ুচাপ ও বায়ুপ্রবাহ-

বায়ুচাপ:

বায়ু তার ওজনের কারণে ভূপৃষ্ঠের উপর যে চাপ প্রয়োগ করে তাই বায়ুচাপ। বায়ু উচ্চচাপ অঞ্চল থেকে নিম্নচাপ অঞ্চলে প্রবাহিত হয়।

সূর্যের আলোতে রাখার পর বালির ট্রে-টি পানির ট্রের চেয়ে দ্রুত গরম হয়েছে। আবার ছায়ায় বালির ট্রে-টি পানির ট্রে অপেক্ষা দ্রুত ঠান্ডা হয়েছে। এই পরীক্ষা থেকে আমরা এই সিদ্ধান্তে আসতে পারি যে, বালি বা মাটি পানি অপেক্ষা দ্রুত গরম বা ঠান্ডা হয়।

উচ্চচাপ ও নিম্নচাপ:

দিনে স্থলভাগ জলভাগ থেকে উষ্ণ থাকে। উষ্ণ স্থলভাগ তার উপরে থাকা বাতাসের উষ্ণতা বৃদ্ধি করে। বায়ু উষ্ণ হলে তা হালকা হয়ে উপরে উঠে যায়। ফলে ঐ স্থান ফাঁকা হয়ে নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়। অপর দিকে সমুদ্রের উপরের বায়ু স্থলভাগ থেকে ঠান্ডা হওয়ার কারণে তা ভারী হয়ে নিচে নেমে আসে। এর ফলে সমুদ্রের উপর বায়ুর চাপ বেড়ে যায়। নিম্নচাপ অঞ্চলের গরম বায়ু হালকা হয়ে উপরে উঠে যায়। এর ফলে সৃষ্ট ফাঁকা স্থান পূরণের জন্য উচ্চচাপ অঞ্চলের শীতল বায়ু নিম্নচাপ অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হয়। রাতে স্থলভাগ সমুদ্রের তুলনায় ঠান্ডা থাকে। তাই তখন স্থলভাগে বায়ুর উচ্চচাপ ও সমুদ্রে নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়।

বাংলাদেশে বর্ষাকালে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু এবং শীতকালে উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ু প্রবাহিত হয়। বর্ষাকালে অর্থাৎ জুন থেকে আগস্ট মাসে বাংলাদেশের স্থলভাগ বঙ্গোপসাগরের চেয়ে উষ্ণ থাকে। শীতকালে অর্থাৎ ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশের স্থলভাগ বঙ্গোপসাগর থেকে শীতল থাকে। স্থলভাগ ও জলভাগের তাপমাত্রার এই বিপরীত অবস্থাই বায়ুর উচ্চচাপ ও নিম্নচাপ সৃষ্টি করে। ফলে মৌসুমি বায়ুপ্রবাহ সৃষ্টি হয়।

১. সঠিক উত্তরটিতে টিক চিহ্ন (✔) দিই।

১) বায়ুর তাপমাত্রা বলতে কী বোঝায়?

ক. বায়ু কতটা গরম বা ঠান্ডা✔
খ. বায়ুতে জলীয়বাষ্প কম না বেশি
গ. বায়ু হালকা বা ভারী
ঘ. সূর্যের আলো বেশি না কম

 

২) বায়ুর চাপ অত্যধিক কমে গেলে কী ঘটে?

ক. ঝড়✔
খ. বৃষ্টি
গ. কুয়াশা
ঘ. শৈত্যপ্রবাহ

 

৩) বাংলাদেশে প্রতি বছর কোনটি দেখা যায়?

ক. বন্যা
খ. ভূমিকম্প
গ. তাপপ্রবাহ✔
ঘ. তুষারপাত

 

৪) আবহাওয়া ও জলবায়ুর মধ্যে পার্থক্য কিসের?

ক. সময়✔
খ. স্থান
গ. দিক
ঘ. শক্তি

গাইড ও সাজেশন পেতে আমাদের অ্যাপটি ইন্সটল করো 👉 Install Now

২. সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন:

১) বাংলাদেশের তিনটি প্রাকৃতিক দুর্যোগের নাম লিখি।
উত্তর: বাংলাদেশের তিনটি প্রাকৃতিক দুর্যোগের নাম হলো-
১. কালবৈশাখী,
২. টর্নেডো ও
৩. ঘূর্ণিঝড়।

 

২) আবহাওয়া কী?
উত্তর: আবহাওয়া হলো কোনো নির্দিষ্ট সময়ে কোনো নির্দিষ্ট স্থানের আকাশ ও বায়ুমণ্ডলের সাময়িক অবস্থা।

 

৩) আবহাওয়ার উপাদানগুলো কী কী?
উত্তর: আবহাওয়ার উপাদানগুলো হলো- তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, বায়ুপ্রবাহ, মেঘ, বৃষ্টিপাত ও বায়ুচাপ।

 

৪) সাধারণত কোন সময়ে সমুদ্র থেকে স্থলভাগে বায়ু প্রবাহিত হয়?
উত্তর: সাধারণত বর্ষাকালে অর্থাৎ জুন থেকে আগস্ট মাসে সমুদ্র থেকে স্থলভাগে বায়ু প্রবাহিত হয়।

 

৫) আমাদের দৈনন্দিন জীবনে আবহাওয়ার পূর্বাভাস কীভাবে সাহায্য করে?
উত্তর: আমাদের দৈনন্দিন জীবনে আবহাওয়ার পূর্বাভাস নিম্নরূপে সাহায্য করে-
১. কোন দিন কোন কাপড় পরবো তা নির্ধারণ করতে সাহায্য করে।
২. ছুটির দিনের আগাম কর্মপরিকল্পনা ঠিক করতে সাহায্য করে।
৩. বাইরে যাওয়ার ক্ষেত্রে ছাতা নিয়ে বের হব কি-না সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে।

 

৩. বর্ণনামূলক প্রশ্ন:

 

১) বায়ুচাপ কী?

উত্তর : বায়ু তার ওজনের কারণে ভূপৃষ্ঠের উপর যে চাপ প্রয়োগ করে তাই বায়ুচাপ। বায়ুচাপ দুই ধরনের। যথা- উচ্চচাপ ও নিম্নচাপ। বায়ু সবসময় উচ্চচাপ অঞ্চল থেকে নিম্নচাপ অঞ্চলে প্রবাহিত হয়। বায়ুচাপের হ্রাস-বৃদ্ধি বৃষ্টিপাতের মৌসুমকে প্রভাবিত করে। বায়ুচাপ হ্রাস পেলে মেঘ-বৃষ্টির সম্ভাবনা বাড়ে। আর বায়ুচাপ বাড়লে শুষ্ক আবহাওয়া বিরাজ করে।

 

২) কীভাবে নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়?

উত্তর: সূর্যের তাপ ভূপৃষ্ঠকে উত্তপ্ত করে। ফলে সেখানে বিরাজমান বায়ুও উষ্ণ হয়ে ওঠে। আর এ উষ্ণতার কারণে বায়ু হালকা হয়ে উপরে উঠে যায়। ফলে ঐ স্থানের বায়ুরচাপ কমে গিয়ে নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়।

 

৩) বাংলাদেশে কেন বর্ষাকালে অধিক বৃষ্টিপাত হয়?

উত্তর : বাংলাদেশে বর্ষাকালে অধিক বৃষ্টিপাতের কারণ নিম্নরূপ-
১. বর্ষাকালে সূর্য বাংলাদেশের উপর খাড়াভাবে কিরণ দেয়।
২. বর্ষাকালে বাংলাদেশে মাসিক গড় আর্দ্রতার পরিমাণ ও মাসিক গড় বৃষ্টিপাত অন্যান্য মাসের তুলনায় বেশি।
৩. এ সময় দক্ষিণে-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু বঙ্গোপসাগর থেকে প্রচুর জলীয়বাষ্প নিয়ে আসে।
৪. এই জলীয়বাষ্প ঠান্ডা হয়ে বর্ষাকালে বাংলাদেশের অধিক বৃষ্টিপাত ঘটায়।

 

৪) কালবৈশাখী ঝড়ের কারণ ব্যাখ্যা করি।

উত্তর: গ্রীষ্মকালে বাংলাদেশে যে বজ্রঝড় হয় তাই কালবৈশাখী
নামে পরিচিত। এ ঝড় মূলত স্থলভাগ অত্যন্ত গরম হওয়ার কারণেই সৃষ্টি হয়। গ্রীষ্মকালে যখন সূর্য স্থলভাগে খাড়াভাবে কিরণ দেয়, তখন বায়ু হালকা হয়ে উপরে উঠে যায়। ফলে সেখানে নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়। আর এ নিম্নচাপের প্রভাবে সঞ্চারণশীল ধূসর মেঘ সোজা উপরে উঠে গিয়ে জমা হয়। তারপর সেই মেঘ ঘনীভূত হয়ে ঝড়ো হাওয়া, ভারী বৃষ্টি, বজ্রবৃষ্টি, শিলাবৃষ্টি ইত্যাদি সৃষ্টি করে। আর এটাই কালবৈশাখী।

 

৫) আবহাওয়া ও জলবায়ুর মধ্যে মিল ও অমিল কোথায়?

উত্তর: আবহাওয়া ও জলবায়ুর মধ্যে মিল ও অমিল নিচে উল্লেখ করা হলো-
মিল: আবহাওয়া ও জলবায়ু একই উপাদান দ্বারা প্রভাবিত হয়। উপাদানগুলো হলো- তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, বায়ুপ্রবাহ, মেঘ, বৃষ্টিপাত ও বায়ুচাপ।
অমিল:
১. আবহাওয়া হলো কোনো স্থানের আকাশ ও বায়ুমণ্ডলের সাময়িক অবস্থা। অন্যদিকে কোনো স্থানের আবহাওয়ার দীর্ঘদিনের গড় অবস্থা হলো জলবায়ু।
২. আবহাওয়া অল্প সময়ে পরিবর্তিত হলেও জলবায়ু পরিবর্তন হতে অনেক বছর কেটে যায়।

 

৬) জানুয়ারি এবং জুলাই মাসের মধ্যে কোন মাসটি বনভোজনের জন্য উপযুক্ত? কেন?

উত্তর: জানুয়ারি এবং জুলাই মাসের মধ্যে জানুয়ারি মাসটি বনভোজনের জন্য উপযুক্ত।
কারণ: জুলাই মাসে বর্ষা ঋতু বিরাজ করে। এ সময় অতি বর্ষায় মাঠ-ঘাট তলিয়ে যায়। প্রকৃতির এ অবস্থাটি বনভোজনের জন্য মোটেও উপযোগী নয়।
অন্যদিকে জানুয়ারি মাসে শীত ঋতু বিরাজ করে। বনভোজনের স্থানগুলো এ সময় শুকনো থাকে। এ সময়’ প্রকৃতিতে বিরূপ আবহাওয়া বিরাজ করে না বলে সবাই সুন্দর পরিবেশে বনভোজন করতে পারে। তাই জানুয়ারি মাসটি বনভোজনের জন্য উপযোগী।


প্রিয় শিক্ষার্থী, তোমাদের ক্লাসের সকল বইয়ের সমাধান পেতে আমাদের অ্যাপটি👉 Install করো।


আরও পড়ুন: ৫ম শ্রেণির বিজ্ঞান অধ্যায় ১০ প্রশ্নোত্তর

আরও পড়ুন: ৫ম শ্রেণির বিজ্ঞান অধ্যায় ১২ জলবায়ু পরিবর্তন প্রশ্ন উত্তর

Codehorse App

Check Also

৫ম শ্রেণি বিজ্ঞান প্রশ্ন উত্তর

পঞ্চম শ্রেণি জনসংখ্যা ও প্রাকৃতিক পরিবেশ প্রশ্নোত্তর

পঞ্চম শ্রেণি জনসংখ্যা ও প্রাকৃতিক পরিবেশ প্রশ্নোত্তর: বিশ্বের জনসংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। বাড়তি জনসংখ্যার জন্য খাদ্য, …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *