পঞ্চম শ্রেণীর বাংলা বীরের রক্তে স্বাধীন এ দেশ প্রশ্নোত্তর
৫ম শ্রেণি: বীরের রক্তে স্বাধীন এ দেশ

বীরের রক্তে স্বাধীন এ দেশ পঞ্চম শ্রেণীর বাংলা

বীরের রক্তে স্বাধীন এ দেশ পঞ্চম শ্রেণীর বাংলা: ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় দীর্ঘ নয় মাস এক রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে স্বাধীন হয় আমাদের এই বাংলাদেশ। সেসময় পাকিস্তানি সেনা ও এদেশীয় রাজাকাররা এদেশের নিরীহ মানুষের ওপর অমানুষিক নির্যাতন করে। তাদের সেই নির্মম অত্যাচারে প্রাণ যায় অসংখ্য মানুষের। এদেশের বীর সন্তানরা দীর্ঘ নয় মাস সংগ্রাম করে এদেশকে স্বাধীন করেন। তাঁদের মধ্যে বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখ, বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আবদুর রউফ, বীরশ্রেষ্ঠ মোহাম্মদ রুহুল আমিন অন্যতম। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন পাকিস্তানি সেনাদের মর্টারের গোলায় যশোরে শহিদ হন ল্যান্সনায়েক নূর মোহাম্মদ শেখ। মহালছড়ির বুড়িঘাট এলাকায় পাকিস্তানি সেনাদের গোলার আঘাতে শহিদ হন বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আবদুর রউফ। খুলনার কাছাকাছি ভৈরব নদীতে জাহাজের উপর পাকিস্তানি সেনারা বোমা ফেললে ডান হাত উড়ে যায় বীরশ্রেষ্ঠ মোহাম্মদ রুহুল আমিনের। আহত রুহুল আমিনকে রাজাকাররা নির্মমভাবে হত্যা করে। এভাবেই শহিদ হয়েছেন লক্ষ লক্ষ দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধা। যাঁদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি আমাদের প্রিয় স্বাধীনতা।

বীরের রক্তে স্বাধীন এ দেশ পঞ্চম শ্রেণীর বাংলা:

১. শব্দগুলো পাঠ থেকে খুঁজে বের করি। অর্থ বলি।
টহল, আসন্ন, অবধারিত, রক্তস্রোতে, রঞ্জিত, শায়িত।
উত্তর:
টহল – পাহারা দেওয়া।
আসন্ন – আগতপ্রায়/নিকটবর্তী।
অবধারিত – অনিবার্য।
রক্তস্রোতে – রক্তের ঢেউয়ে।
রঞ্জিত – লাল করা হয়েছে যা।
শায়িত – শুয়ে আছে এমন।

২. ঘরের ভিতরের শব্দগুলো খালি জায়গায় বসিয়ে বাক্য তৈরি করি।
নূর মোহাম্মদ শেখ, নান্নু মিয়া, গৌরব, ১৯৪৩ ৮ই মে, রুহুল আমিন;
ক. ল্যান্সনায়েক নূর মোহাম্মদ শেখের দলে ছিলেন অসীম সাহসী মুক্তিযোদ্ধা___।
খ. নিজের জীবনকে তুচ্ছ করে___সেদিন এভাবেই রক্ষা করেছিলেন মুক্তিযোদ্ধাদের জীবন।
গ. ল্যান্সনায়েক মুন্সী আবদুর রউফ___ সালের___ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারি থানার সালামতপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
ঘ. এই যুদ্ধে জয়ী বাহিনী হিসেবে মুক্তিযোদ্ধারা বয়ে এনেছেন অসীম___।

উত্তর:

ক. ল্যান্সনায়েক নূর মোহাম্মদ শেখের দলে ছিলেন অসীম সাহসী মুক্তিযোদ্ধা নান্নু মিয়া
খ. নিজের জীবনকে তুচ্ছ করে নূর মোহাম্মদ শেখ সেদিন এভাবেই রক্ষা করেছিলেন মুক্তিযোদ্ধাদের জীবন।
গ. ল্যান্সনায়েক মুন্সী আবদুর রউফ ১৯৪৩  সালের ৮ই মে ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারি থানার সালামতপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
ঘ. এই যুদ্ধে জয়ী বাহিনী হিসেবে মুক্তিযোদ্ধারা বয়ে এনেছেন অসীম গৌরব

৩. প্রশ্নগুলোর উত্তর বলি ও লিখি।
ক. নূর মোহাম্মদ শেখ কীভাবে নিজের জীবন তুচ্ছ করে মুক্তিযোদ্ধাদের জীবন বাঁচিয়েছিলেন?
উত্তর: নূর মোহাম্মদ শেখ অসীম সাহস ও বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করে মুক্তিযোদ্ধাদের জীবন বাঁচিয়েছিলেন। যশোরের ছুটিপুরে পাকিস্তানি ক্যাম্পের একটু দূরেই টহল দিচ্ছিলেন, পাঁচজন মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থান টের পেয়ে পাকিস্তানি সেনারা অতর্কিতে আক্রমণ করে। এ দলের নেতৃত্বে ছিলেন ল্যান্সনায়েক নূর মোহাম্মদ শেখ। সহযোদ্ধা নান্নু মিয়ার গায়ে গুলি লাগলে নূর মোহাম্মদ শেখ তাঁকে কাঁধে তুলে নিলেন আর এক হাতে গুলি ছুড়তে থাকেন। পাকিস্তানি সেনাদের তিনি বুঝতেই দেননি যে এখানে এত স্বল্প মুক্তিযোদ্ধা আছেন। ফলে অন্য মুক্তিযোদ্ধারা বেঁচে যান। কিন্তু পাকিস্তানি সেনাদের মর্টারের একটি গোলা এসে লাগে তাঁর গায়ে। ততক্ষণে তাঁর সহযোদ্ধারা নিরাপদে সরে গেছেন। এভাবে নিজের জীবনের বিনিময়ে নূর মোহাম্মদ শেখ অন্য মুক্তিযোদ্ধাদের জীবন বাঁচিয়েছিলেন।

খ. ল্যান্সনায়েক মুন্সী আবদুর রউফের যুদ্ধের ঘটনাটা লিখি।
উত্তর: ১৯৭১ সালের ৮ এপ্রিল। মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি – নৌসেনাদের উপর আক্রমণ করার সিদ্ধান্ত নেন। এজন্য তাঁরা মহালছড়ির কাছে বুড়িঘাট এলাকার চিংড়ি খালের দুই পাশে অবস্থান গ্রহণ করেন। সেখানে পাকিস্তানি সেনারা সাতটি স্পিডবোট ও দুটি মোটর লঞ্চ নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর আক্রমণ করে। মুক্তিযোদ্ধারা সংখ্যায় কম থাকায় সেখানে তাঁদের মৃত্যু ছিল অনিবার্য। তাই মুন্সী আবদুর রউফ একটা হালকা মেশিনগান নিয়ে গুলি ছুড়তে শুরু করলেন আর সহযোদ্ধাদের নিরাপদে সরে যেতে বললেন। মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে পাকিস্তানি সেনাদের সাতটি স্পিডবোটই ডুবে গেল। ফলে তারা পিছু হটতে থাকে। এমন সময় হঠাৎ তাদের ছোড়া একটি গোলা এসে পড়ে আবদুর রউফের ওপর। এভাবে তিনি শহিদ হন।

গ. বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন কীভাবে শহিদ হয়েছিলেন?
উত্তর: ১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর। মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি সেনাদের কাছ থেকে খুলনা দখলের উদ্দেশ্যে ভৈরব নদী, বেয়ে এগিয়ে আসছে। মুক্তিযোদ্ধাদের ছিল ‘বিএনএস ‘পলাশ’ ও ‘বিএনএস পদ্মা’ নামে দুটি যুদ্ধজাহাজ। এমন সময় বোমারু বিমান – বোমাবর্ষণ করে জাহাজ দুটির উপর। ফলে ইঞ্জিনে আগুন ধরে যায়। রুহুল আমিনের ডান হাতটি উড়ে যায়। তিনি আহত অবস্থায় নদীতে ঝাঁপ দেন এবং সাঁতরে পাড়ে ওঠেন। কিন্তু রাজাকাররা সেখানে তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করে।

ঘ. পাঠ থেকে মুক্তিযুদ্ধের বীরযোদ্ধাদের সম্পর্কে যা জেনেছি তা নিজের ভাষায় লিখি।
উত্তর: ‘বীরের রক্তে স্বাধীন এ দেশ’ গল্পে তিনজন মহান মুক্তিযোদ্ধার সশস্ত্র সংগ্রাম ও জীবনদানের ঘটনা আমরা জানতে পারি। সেই সঙ্গে আমরা এও জানতে পারি যে, মুক্তিযোদ্ধারা এদেশকে ভালোবেসে এদেশের মুক্তির জন্য যুদ্ধ করেছেন। সেই যুদ্ধে অনেক মুক্তিযোদ্ধা জীবন দিয়েছেন। পাকিস্তানি সেনাদের অত্যাধুনিক অস্ত্র আর প্রচুর সৈন্যের সামনে তাঁরা যুদ্ধ করতে ভয় পাননি, বরং বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করেছেন। তাঁরা সহযোদ্ধাদের নিজেদের জীবন দিয়েও নিরাপদে সরে যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন। সর্বোপরি মুক্তিযুদ্ধের সময় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের দেশপ্রেম, সাহস আর মনোবলের জন্যই স্বাধীন হয়েছে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ।

৪. বিপরীত শব্দ লিখি এবং তা দিয়ে একটি করে বাক্য লিখি।
দুরন্ত – শান্ত – শান্ত ছেলেটি শুধু পড়তে ভালোবাসে।
অসীম – সসীম – মানুষের আয়ুষ্কাল সসীম।
সুনাম– দুর্নাম – খারাপ কাজ করলে দুর্নাম হয়।
বীর – ভীরু – ছেলেটি খুব ভীরু।
জয় – পরাজয় – মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে পাকিস্তানিরা পরাজয় বরণ করে।
জীবন – মরণ – মুক্তিযোদ্ধারা মরণপণ যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছেন।

৫. ঠিক উত্তরটিতে টিক (√) চিহ্ন দিই।
ক. বাবা মারা যাওয়ার পর নূর মোহাম্মদ কিসে যোগ দিলেন?
১. বাংলাদেশ রাইফেলসে
২. ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলসে √
৩. বাংলাদেশ নেভিতে
৪. কোনোটিই না

খ. মুন্সী আবদুর রউফ মারা গিয়েছিলেন-
১. গুলিতে
২. গোলার আঘাতে √
৩. গ্রেনেড বিস্ফোরণে
৪. পানিতে ডুবে

গ. মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে পাকিস্তানিদের কয়টি স্পিডবোট ডুবে গিয়েছিল?
১. পাঁচটি
২. আটটি
৩. সাতটি √
৪. নয়টি

৬. আমাদের জাতীয় দিবসগুলোর পাশে তারিখবাচক শব্দ লিখি।
ক. শহিদ দিবস – একুশে ফেব্রুয়ারি
খ. স্বাধীনতা দিবস – ছাব্বিশে মার্চ
গ. বাংলা নববর্ষ – পহেলা বৈশাখ
ঘ. শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস- চৌদ্দই ডিসেম্বর
ঙ. বিজয় দিবস – ষোলোই ডিসেম্বর

আরও পড়ুন: ফুটবল খেলোয়াড় পঞ্চম শ্রেণীর বাংলা

আরও পড়ুন: পঞ্চম শ্রেণীর বাংলা সবার আমি ছাত্র

Codehorse App

Check Also

৫ম শ্রেণি বিজ্ঞান প্রশ্ন উত্তর

পঞ্চম শ্রেণি জনসংখ্যা ও প্রাকৃতিক পরিবেশ প্রশ্নোত্তর

পঞ্চম শ্রেণি জনসংখ্যা ও প্রাকৃতিক পরিবেশ প্রশ্নোত্তর: বিশ্বের জনসংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। বাড়তি জনসংখ্যার জন্য খাদ্য, …

2 comments

  1. Mariya Akter Simki

    বীরের রক্তে স্বাধীন এ দেশ,, এই রচনা টা গুগলে নেই 😔 কালকে স্কুলে লিখে নিয়ে যেতে হবে এখন কি করবো তাই যদি পারেন তাহলে এই রচনাটি লেইখেন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *