৪র্থ শ্রেণি বিজ্ঞান ৪র্থ অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর: সুস্থ ও সবল শরীরের জন্য সুষম খাদ্যের প্রয়োজন। খাদ্য দেহের গঠন, বৃদ্ধিসাধন, ক্ষয়পূরণ ও শক্তি জোগায় এবং রোগ প্রতিরোধ করে। খাদ্যে মোট ছয় প্রকার উপাদান থাকে। সব খাদ্যদ্রব্য আমরা বিভিন্ন উদ্ভিদ ও প্রাণী থেকে পেয়ে থাকি। আমিষ দেহের গঠন, বৃদ্ধিসাধন ও ক্ষয়পূরণ করে। ভিটামিন হচ্ছে একটি স্বল্প পরিমাণের খাদ্য উপাদান, যা দেহের সঠিক পুষ্টির জন্য প্রয়োজন। দেহে সুনির্দিষ্ট কাজ ও বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী এটি ছয় প্রকার।
৪র্থ শ্রেণি বিজ্ঞান ৪র্থ অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর
১. শূন্যস্থান পূরণ কর।
১) আমরা পরিবেশের __ এবং প্রাণী থেকে খাদ্য পেয়ে থাকি।
২) মাছ, মাংস এবং ডিম থেকে পাওয়া আমিষকে __ বলে।
৩) সুস্থ থাকার জন্য প্রতিদিন __ খেতে হবে।
৪) ভিটামিন ‘এ’ এর অভাব হলে রাতকানা হয়।
উত্তর: ১) বিভিন্ন উদ্ভিদ, ২) প্রাণিজ আমিষ, ৩) সুষম খাদ্য, ৪) রাতকানা।
২. সঠিক উত্তরটিতে টিক চিহ্ন (✓) দাও।
১) কোনটি প্রাণী থেকে আসা খাদ্য?
ক.পাউরুটি ✓খ.পনির
গ.বিস্কুট ঘ.বাদাম
২) কোন পুষ্টি উপাদান দেহের গঠন, ক্ষয়পূরণ এবং বৃদ্ধি সাধন করে?
ক.শর্করা খ.ভিটামিন
গ.চর্বি ✓ঘ.আমিষ
৩) কোন খাদ্যের প্রধান উপাদান শর্করা ?
ক.দুগ্ধজাত খাদ্য ✓খ.খাদ্যশস্য ও আলু
গ.শাকসবজি ঘ.মাংস ও ডাল
৩. সংক্ষিপ্ত উত্তর প্রশ্ন :
১) ভিটামিন “সি” এর উৎস কী?
উত্তর: ভিটামিন “সি” এর উৎস হলো বিভিন্ন ফল যেমন- পেয়ারা, আমলকি, কমলা, লেবু এবং শাকসবজি যেমন- টমেটো, বাঁধাকপি, ব্রোকলি ইত্যাদি।
২) ভিটামিন “এ” এর কাজ কী?
উত্তর: ভিটামিন “এ” এর কাজ হলো স্বাভাবিক দৃষ্টিশক্তি বজায় রাখা। এছাড়াও ভিটামিন “এ” সুস্থ ত্বক ও দাঁত গঠনে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
৩) ভিটামিনের অভাবে হতে পারে এমন তিনটি রোগের নাম লেখ।
উত্তর: ভিটামিনের অভাবে বিভিন্ন ধরনের রোগ হতে পারে। তিনটি উল্লেখযোগ্য রোগ হলো –
ক. রাতকানা ( ভিটামিন ‘এ’ এর অভাবে হয়)।
খ. স্কার্ভি ( ভিটামিন ‘সি’ এর অভাবে হয়)।
গ. রিকেটস ( ভিটামিন ‘ডি’ এর অভাবে হয়)।
৪) ভিটামিন বি কমপ্লেক্স কী? কোন কোন খাদ্যে এই ভিটামিন পাওয়া যায়?
উত্তর: ভিটামিন ‘বি’ বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন নিয়ে গঠিত, তাই একে ভিটামিন ‘বি’ কমপ্লেক্স বলা হয়। শাকসবজি, ফল, মাংস, মাছ এবং দুগ্ধজাত খাদ্যদ্রব্যে এই ভিটামিন পাওয়া যায়।
৫) নিরাপদ খাদ্য বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: নিরাপদ খাদ্য বলতে এমন খাদ্যকে বোঝায় যা শুধু সুস্বাদু নয়, বরং সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিকর জীবাণু, দূষণ ও ভেজালমুক্ত।
৪. বর্ণনামূলক প্রশ্ন :
১) সুষম খাদ্য কেন প্রয়োজন ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: শরীরের সুস্থতার জন্য সুষম খাদ্য প্রয়োজন। সকল প্রকার খাদ্য ছয়টি দলের অন্তর্ভুক্ত। সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য প্রতিদিন সকল দল থেকে দেহের চাহিদা অনুযায়ী আমাদের পরিমাণমতো খাদ্য গ্রহণ করা উচিত। প্রতিটি খাদ্য দল থেকে বিভিন্ন ধরনের খাদ্যদ্রব্য গ্রহণ করে আমরা সকল প্রকার পুষ্টি উপাদান পেয়ে থাকি। আর সুষম খাদ্যে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় সকল প্রকার পুষ্টি উপাদান পরিমাণমতো থাকে। সুষম খাদ্য গ্রহণ করলে দেহের বৃদ্ধি ও বিকাশ স্বাভাবিক থাকে এবং কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। তাই সুস্থ থাকার জন্য প্রতিদিন আমাদের সুষম খাদ্য গ্রহণ করা উচিত।
২) পর্যাপ্ত পুষ্টি উপাদান পাওয়ার সহজ উপায় বর্ণনা কর।
উত্তর: প্রতিদিন সুষম খাদ্য গ্রহণ করে আমরা পর্যাপ্ত পুষ্টি উপাদান সহজে পেতে পারি। সুষম খাদ্যে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান- শর্করা, আমিষ, স্নেহ, ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ নির্দিষ্ট অনুপাতে থাকে। তাই পর্যাপ্ত পুষ্টি উপাদান পেতে হলে সুষম খাদ্য দিয়ে একটি আদর্শ খাদ্য তালিকা তৈরি করতে হবে। পুষ্টি উপাদান শর্করা পাওয়ার জন্য খাদ্য তালিকায় খাদ্যশস্য ও আলু রাখতে হবে। ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ পেতে শাকসবজি ও ফলমূল গ্রহণ করতে হবে। আমিষের জন্য মাছ, মাংস ও ডাল এবং ক্যালসিয়াম, ভিটামিনের জন্য দুগ্ধজাত খাদ্য রাখতে হবে। তাছাড়া স্নেহ নামক পুষ্টি উপদান পাওয়ার জন্য খাদ্য তালিকায় তেল ও চর্বিজাতীয় খাদ্য রাখতে হবে। এভাবে একটি আদর্শ খাদ্য তালিকায় সুষম খাদ্য রেখে পর্যাপ্ত পুষ্টি উপাদান সহজে পেতে পারি।
৫. ডান পাশের শব্দের সাথে বাম পাশের শব্দের মিল করি।
খাদ্যশস্য-আম
শাকসবজি-দই
ফল-সয়াবিন তেল
দুগ্ধজাত খাদ্য-ফুলকপি
তেল ও চর্বি-চাল
উত্তর: আম – ফল। ; দই – দুগ্ধজাত খাদ্য। ; সয়াবিন তেল – তেল ও চর্বি।; ফুলকপি — শাকসবজি। ; চাল – খাদ্যশস্য।
অতিরিক্ত প্রশ্ন ও উত্তর
১. শূন্যস্থান পূরণ কর ।
১. মাছ, মাংস, ডিম __ খাদ্যদ্রব্য।
২. পুষ্টি উপাদান __ ধরনের।
৩. ভিটামিন __ প্রকার।
৪. __ আমাদের দেহ কর্মক্ষম রাখতে পারে।
৫. ভিটামিন ‘এ’ এর অভাবে __ রোগ হয়।
৬. মটরশুঁটি, ডাল, বাদাম ইত্যাদি __ আমিষ।
৭. বেরিবেরি রোগ হয় ভিটামিন __ এর অভাবে।
৮. সুস্থ থাকার জন্য প্রতিদিন __ গ্রহণ করে হবে।
৯. খাদ্য দল __ প্রকার।
১০. মাখন হতে __ নামক পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায়।
উত্তর: ১. প্রাণিজ, ২. পাঁচ, ৩. ছয়, ৪. ভিটামিন, ৫. রাতকানা, ৬. উদ্ভিজ্জ, ৭. ‘বি’ কমপ্লেক্স, ৮. সুষম খাদ্য, ৯. ছয়, ১০. চর্বি।
২. বাম পাশের অংশের সাথে ডান পাশের অংশের মিল কর ।
ভিটামিন ‘এ’ → রিকেটস
ভিটামিন ‘বি’ কমপ্লেক্স → দুর্বল পেশি
ভিটামিন ‘সি’ → রাতকানা
ভিটামিন ‘ডি’ → বেরিবেরি
ভিটামিন ‘ই’ → স্কার্ভি
উত্তর: ভিটামিন ‘এ’ → রাতকানা। ; ভিটামিন ‘বি’ কমপ্লেক্স → বেরিবেরি। ; ভিটামিন ‘সি’ → স্কার্ভি। ; ভিটামিন ‘ডি’ → রিকেটস। ; ভিটামিন ‘ই’ → দুর্বল পেশি।
৩. সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর
১. দুটি উদ্ভিজ্জ খাদ্যদ্রব্যের নাম লেখ।
উত্তর:দুটি উদ্ভিজ্জ খাদ্যদ্রব্য হলো- ফল ও ডাল।
২. তিনটি প্রাণিজ খাদ্যদ্রব্যের নাম লেখ।
উত্তর: তিনটি প্রাণিজ খাদ্যদ্রব্য হলো- মাছ, মাংস, ও ডিম।
৩. ভিটামিনের কাজ কী?
উত্তর: ভিটামিন আমাদের দেহ কর্মক্ষম রাখতে সহায়তা করে। দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, দেহের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এছাড়া চোখ ও হাড়সহ দেহের বিভিন্ন অঙ্গের কাজ সম্পাদনে সহায়তা করে।
৪. ভিটামিন ‘এ’ এর উৎস কী?
উত্তর: ভিটামিন ‘এ’ এর উৎস হলো- গাজর, পালংশাক, মিষ্টি কুমড়া. ছোট মাছ, দুধ, ডিমের কুসুম ইত্যদি।
৫. ভিটামিন ‘সি’ এর কাজ কী?
উত্তর: ভিটামিন ‘সি’ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, দেহের বৃদ্ধি সাধন করে এবং দেহকে কর্মক্ষম রাখতে সহায়তা করে।
৬. ভিটামিন ‘কে’ এর কাজ কী?
উত্তর:ভিটামিন ‘কে’ কেটে যাওয়া স্থানে রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে।
৭. আমিষের কাজ কী?
উত্তর: আমিষ দেহের গঠন, ক্ষয়পূরণ এবং বৃদ্ধিসাধন করে।
৮. সুষম খাদ্য কী?
উত্তর: যে খাদ্যে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় আমিষ, শর্করা ভিটামিন, খনিজ পদার্থ ও স্নেহ এই কয়টি পুষ্টি উপাদানের সবগুলোই পরিমাণমতো থাকে, তাকে সুষম খাদ্য বলে।
৪. কাঠামোবদ্ধ প্রশ্ন ও উত্তর
১. খাদ্যের ভিটামিন আমাদের কী কাজে লাগে?
উত্তর: আমাদের দেহ কর্মক্ষম রাখতে ভিটামিন নামক খাদ্য উপাদান অতীব প্রয়োজনীয়। বিভিন্ন উদ্ভিদ ও প্রাণী হতে ভিটামিন ‘এ’, ‘বি’, ‘সি’, ‘ডি’, ‘ই’ এবং ভিটামিন ‘কে’ এই ছয় প্রকার ভিটামিন পাওয়া যায়। নিম্নে এদের কাজ দেওয়া হলো-
১)ভিটামিন ‘এ’ স্বাভাবিক দৃষ্টিশক্তি বজায় রাখে।
২)ভিটামিন ‘বি’ দেহে শক্তি উৎপাদনে সহায়তা করে।
৩)ভিটামিন ‘সি’ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
৪)ভিটামিন ‘ডি’ হাড়ের বৃদ্ধি ও গঠনে সহায়তা করে।
৫)ভিটামিন ‘ই’ রক্ত কোষগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া থেকে রক্ষা করে।
৬)ভিটামিন ‘কে’ কেটে যাওয়া স্থানে রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে।
২. আমিষ জাতীয় খাদ্য কী? আমিষ জাতীয় খাদ্য কত প্রকার ও কী কী বর্ণনা কর।
উত্তর: যে ধরনের খাদ্য দেহের গঠন, বৃদ্ধিসাধন ও ক্ষয়পূরণ করে তাকে আমিষ জাতীয় খাদ্য বলে।
আমিষ জাতীয় খাদ্য দুই প্রকার। যথা- ১) উদ্ভিজ্জ আমিষ এবং ২) প্রাণিজ আমিষ।
১) যেসব আমিষ উদ্ভিদ থেকে পাওয়া যায় তাদের উদ্ভিজ্জ আমিষ বলে। যেমন- ডাল, শিমের বিচি, বাদাম ইত্যাদি।
২) যেসব আমিষ প্রাণী থেকে পাওয়া যায় তাদের প্রাণিজ আমিষ বলে। যেমন- মাছ, মাংস, ডিম, দুধ ইত্যাদি।
৩. মাসুদ রাতকানা রোগে ভুগছে। কোন ভিটামিনের অভাবে তার এ রোগটি হয়েছে বলে তুমি মনে কর? ভিটামিনটির উৎস ও কাজ সম্পর্কে লিখ।
উত্তর: মাসুদ ভিটামিন ‘এ’ এর অভাবে রাতকানা রোগে ভুগছে।
ভিটামিন ‘এ’ এর উৎস হলো- গাজর, পালংশাক, মিষ্টি কুমড়া, ছোট মাছ, দুধ, ডিমের কুসুম ইত্যাদি।
ভিটামিন ‘এ’ এর কাজ –
১)স্বাভাবিক দৃষ্টিশক্তি বজায় রাখা।
২)সুস্থ ত্বক ও দাঁত গঠন করা।
৩)রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করা।
৪. তোমার পরিবারের জন্য একটি সহজলভ্য ও স্বল্পমূল্যের সুষম খাদ্যের তালিকা তৈরি কর।
উত্তর: সুষম খাদ্যে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানের সবগুলোই পরিমাণ মতো থাকে। সহজলভ্য ও স্বল্পমূল্যের খাদ্য দিয়ে সুষম খাদ্য তালিকা তৈরি করা যায়। নিম্নে আমার পরিবারের জন্য এরূপ একটি তালিকা তৈরি করলাম-
শর্করা: চাল, গম, আলু।
ভিটামিন, খনিজ পদার্থ: শাকসবজি, গাজর, পেঁয়াজ, ঢেঁড়স, মিষ্টি কুমড়া।
ভিটামিন, খনিজ পদার্থ: জাম, কাঁঠাল, কলা, কমলা।
আমিষ: মাংস, মাছ, ডিম।
ক্যালসিয়াম, ভিটামিন: দুধ, দই।
চর্বি: সরিষার তেল, সয়াবিন তেল।