৫ম শ্রেণি বিজ্ঞান প্রশ্ন উত্তর
৫ম শ্রেণি - বিজ্ঞান প্রশ্ন উত্তর

৫ম শ্রেণির বিজ্ঞান ৭ম অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর

৫ম শ্রেণির বিজ্ঞান ৭ম অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর: স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে আমরা স্বাস্থ্য ভালো রাখতে পারি এবং স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে পারি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরেও আমরা রোগাক্রান্ত হই। আমরা কেন রোগাক্রান্ত হই? আমরা কীভাবে রোগ প্রতিরোধ এবং রোগের প্রতিকার করতে পারি?

১. সংক্রামক রোগ:

(১) সংক্রামক রোগ কী?

বিভিন্ন জীবাণু যেমন- ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ছত্রাক ইত্যাদির মাধ্যমে দেহের বিভিন্ন রোগ হয়ে থাকে। এদের মধ্যে কিছু রোগ আছে যা একজন থেকে আরেকজনের শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। এদেরকে সংক্রামক রোগ বলে।

(২) সংক্রামক রোগের বিস্তার-

সংক্রামক রোগ বিভিন্নভাবে ছড়াতে পারে। কিছু কিছু রোগ হাঁচি-কাশির মাধ্যমে একজন থেকে আরেক জনে সংক্রমিত হয়। সংক্রমিত ব্যক্তির ব্যবহৃত জিনিস যেমন- গ্লাস, প্লেট, চেয়ার, টেবিল, জামাকাপড়, টয়লেট ইত্যাদি ব্যবহারের মাধ্যমে ও আমরা জীবাণু দ্বারা সংক্রমিত হতে পারি। মশার মতো পোকামাকড় বা কুকুরের মতো প্রাণীর কামড়ের মাধ্যমে কিছু রোগ ছড়াতে পারে। আবার দূষিত খাদ্য গ্রহণ এবং দূষিত পানি পানের মাধ্যমেও সংক্রামক রোগ ছড়াতে পারে।

৩) সংক্রামক রোগের প্রকারভেদ

সংক্রামক রোগ অনেক ধরনের হয়ে থাকে যা নিচে দেওয়া হলো।

বায়ুবাহিত রোগ:

বায়ুবাহিত রোগ হলো সে সকল রোগ যা হাঁচি-কাশি বা কথাবার্তা বলার সময় বায়ুতে জীবাণু ছড়ানোর মাধ্যমে হয়ে থাকে। সোয়াইন ফ্লু, হাম, গুটিবসন্ত, যক্ষ্মা এবং ইনফ্লুয়েঞ্জা ইত্যাদি বায়ুবাহিত রোগ।

পানিবাহিত রোগ:

পানিবাহিত রোগ হলো সে সকল রোগ যা জীবাণুযুক্ত দূষিত পানির মাধ্যমে বিস্তার লাভ করে। অনেক ধরনের পানিবাহিত রোগ রয়েছে। যেমন- ডায়রিয়া, কলেরা, আমাশয় ও টাইফয়েড।

ছোঁয়াচে রোগ:

রোগাক্রান্ত ব্যক্তির প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সংস্পর্শে যে সকল রোগ সংক্রমণ হয় তাই ছোঁয়াচে রোগ। যেমন-ফু, ইবোলা, হাম ইত্যাদি। এইডস একটি ভিন্ন ধরনের রোগ, যা এইচআইভি ভাইরাসের মাধ্যমে ছড়ায়। যদিও আক্রান্ত ব্যক্তিকে স্পর্শ করলে বা তার ব্যবহৃত কোনো জিনিস ব্যবহার করলে কেউ এইচআইভি দ্বারা আক্রান্ত হবে না।

প্রাণী ও পোকামাকড়বাহিত সংক্রামক রোগ:

বিভিন্ন প্রাণী এবং পোকামাকড়ের মাধ্যমে কিছু জীবাণুবাহিত রোগ ছড়ায়। যেমন- কুকুরের কামড়ের মাধ্যমে জলাতঙ্ক রোগ ছড়ায়। মশার কামড়ের মাধ্যমে ম্যালেরিয়া এবং ডেঙ্গু রোগ ছড়ায়।

(৪) সংক্রামক রোগের প্রতিরোধ এবং প্রতিকার-

সংক্রামক রোগ প্রতিরোধের উপায়

সংক্রামক রোগ জীবাণুর মাধ্যমে হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা এবং রোগের জীবাণু ছড়িয়ে পড়া প্রতিরোধ করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সুষম খাদ্য গ্রহণ করা, নিরাপদ পানি ব্যবহার করা এবং হাত জীবাণুমুক্ত রাখার মাধ্যমে আমরা সুস্থ থাকতে পারি। এ ছাড়া ঘরে পর্যাপ্ত আলো বাতাসের ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন। হাঁচি-কাশির সময় টিস্যু, রুমাল বা হাত দিয়ে মুখ ঢাকা, চারপাশের পরিবেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা ইত্যাদির মাধ্যমে আমরা সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ করতে পারি। বাড়ির আশপাশে পানি জমতে পারে এমন আবর্জনা যেমন- কৌটা, টায়ার, ফুলের টব ইত্যাদি পরিষ্কার রাখতে হবে। কারণ, এখানে জমে থাকা পানিতে ডেঙ্গু এবং ম্যালেরিয়া রোগের বাহক মশা ডিম পাড়ে। প্রয়োজনীয় টিকা নিয়ে এবং অস্বাস্থ্যকর খাবার পরিহার করেও আমরা রোগমুক্ত থাকতে পারি।

সংক্রামক রোগের প্রতিকার

রোগাক্রান্ত হলে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে, পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে এবং প্রচুর পরিমাণে নিরাপদ পানি পান করতে হবে। এগুলো আমাদের সেরে উঠতে সাহায্য করে। হালকা জ্বর হলে বা সামান্য মাথাব্যথা করলে প্রাথমিকভাবে কিছু ঔষধ গ্রহণ করলে আমরা ভালো বোধ করি। তবে যদি জ্বর ভালো না হয়, ক্রমাগত বমি হতে থাকে এবং তীব্র মাথাব্যথা হয় তবে আমাদের অবশ্যই ডাক্তার দেখাতে হবে।

৫ম শ্রেণির বিজ্ঞান ৭ম অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর: 


১. সঠিক উত্তরটিতে টিক চিহ্ন (✔) দিই।

১) টাইফয়েড এর জীবাণু নিচের কোনটির মাধ্যমে ছড়াতে পারে?
ক. পানি✔
খ. বায়ু
গ. মাটি
ঘ. পোকামাকড়

২) কোনটি ম্যালেরিয়া বা ডেঙ্গু রোগের বাহক?
ক. কুকুর
খ. প্রজাপতি
গ. মশা✔
ঘ. মাছি

৩) বয়ঃসন্ধিকালে নিচের কোনটি হয়ে থাকে?
ক. সবার সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক
খ. পড়াশোনার প্রতি অধিক মনোযোগ
গ. শরীরের গঠন পরিবর্তন✔
ঘ. বেশি বেশি অসুস্থ হওয়া

গাইড ও সাজেশন পেতে আমাদের অ্যাপটি ইন্সটল করো 👉 Install Now


২. সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন:


১) কীভাবে সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ করা যায় তার ৫টি উপায় লেখ।

উত্তর: সংক্রামক রোগ প্রতিরোধের ৫টি উপায় হলো-
১. সুষম খাদ্য গ্রহণ ও অস্বাস্থ্যকর খাবার পরিহার করা।
২. নিজেকে সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন এবং জীবাণুমুক্ত রাখা।
৩. বাড়ির চারপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা।
৪. হাঁচি-কাশির সময় টিস্যু, রুমাল বা হাত দিয়ে মুখ ঢাকা।
৫. সময়মতো প্রয়োজনীয় টিকা নেওয়া।

২) বায়ুবাহিত রোগ কী?
উত্তর: বায়ুবাহিত রোগ হলো সেসব রোগ যা হাঁচি-কাশি বা কথা-বার্তা বলার সময় বায়ুতে জীবাণু ছড়ানোর মাধ্যমে হয়ে থাকে যেমন- সোয়াইন ফ্লু, হাম, গুটি বসন্ত, যক্ষ্মা, ইনফ্লুয়েঞ্জা ইত্যাদি।

৩) সংক্রামক রোগ প্রতিকারের উপায়গুলো কী?
উত্তর: সংক্রামক রোগ প্রতিকারের উপায়গুলো হলো-
১. রোগাক্রান্ত হলে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে।
২. পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে।
৩. প্রচুর পরিমাণে নিরাপদ পানি পান করতে হবে।
৪. প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

৪) সংক্রামক রোগ এর কারণ কী?
উত্তর: বিভিন্ন জীবাণু যেমন- ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ছত্রাক ইত্যাদি শরীরে প্রবেশের ফলে সংক্রামক রোগ হয়ে থাকে। সংক্রামক রোগের অনেক কারণ রয়েছে। এগুলোর মধ্যে কয়েকটি
নিচে উল্লেখ করা হলো-
১. সংক্রমিত ব্যক্তির হাঁচি কাশি।
২. সংক্রমিত ব্যক্তির ব্যবহৃত জিনিসপত্র ব্যবহার করা। যেমন-গ্লাস, প্লেট, জামা কাপড়, টয়লেট ইত্যাদি।
৩. মশা, কুকুর ইত্যাদি প্রাণীর কামড়।
৪. দূষিত খাদ্য গ্রহণ করা।
৫. দুষিত পানি পান করা।

৫) বয়ঃসন্ধিকালে শরীরের পরিবর্তনের কারণে দুশ্চিন্তা হলে তুমি কী করবে?
উত্তর: বয়ঃসন্ধিকালে শরীরের পরিবর্তনের কারণে দুশ্চিন্তা হলে বাবা-মা, শিক্ষক-শিক্ষিকা কিংবা বড় ভাই-বোনদের সাথে আলোচনা করে পরামর্শ নিতে হবে।


৫ম শ্রেণির বিজ্ঞান ৭ম অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর:



৩. বর্ণনামূলক প্রশ্ন:

১) সংক্রামক রোগ কীভাবে ছড়ায় তা ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: সংক্রামক রোগ ছড়ানোর উপায়গুলো নিচে ব্যাখ্যা করা হলো-
১. কিছু কিছু সংক্রামক রোগ হাঁচি-কাশির মাধ্যমে একজন থেকে অন্যজনে ছড়িয়ে থাকে।
২. সংক্রমিত ব্যক্তির ব্যবহৃত জিনিসপত্র যেমন- প্লেট, গ্লাস, চেয়ার, টেবিল, জামা-কাপড়, টয়লেট ইত্যাদি ব্যবহারের মাধ্যমে এ রোগ সংক্রমিত হতে পারে।
৩. মশার মতো পোকা-মাকড়ের কামড় বা কুকুরের মতো প্রাণীর কামড়ও এ রোগের বিস্তার ঘটায়।
৪. আবার দূষিত খাদ্য গ্রহণ এবং দূষিত পানি পান ও ব্যবহারের মাধ্যমে এ রোগ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে।

 

২) পানি জমে থাকে এমন বস্তু যেমন- গামলা, টায়ার ইত্যাদি সরিয়ে ফেলার মাধ্যমে আমরা ডেঙ্গু বা ম্যালেরিয়া প্রতিরোধ করতে পারি। এর কারণ কী?
উত্তর: ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়া দুটি উল্লেখযোগ্য সংক্রামক রোগ। এ রোগ দুটির জীবাণুর বাহক হলো মশা। জমে থাকা পানিতে মশা ডিম পাড়ে এবং বংশবিস্তার করে। মশার বংশবিস্তার রোধের মাধ্যমে ডেঙ্গু বা ম্যালেরিয়া রোগের প্রতিরোধ করা সম্ভব। সুতরাং পানি জমে থাকে এমন বস্তু যেমন- গামলা, টায়ার ইত্যাদি সরিয়ে ফেললে মশকী আর ডিম পাড়তে পারে না। ফলে তাদের বংশবিস্তার থেমে যায়। এভাবে মশার বংশবিস্তার রোধে ডেঙ্গু বা ম্যালেরিয়াও প্রতিরোধ করতে পারি।

 

৩) পানিবাহিত এবং বায়ুবাহিত রোগের সাদৃশ্য এবং বৈসাদৃশ্য কোথায়?
উত্তর: পানিবাহিত ও বায়ুবাহিত রোগের সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য নিচে উল্লেখ করা হলো-
সাদৃশ্য:
১. এরা উভয়ই সংক্রামক রোগ।
২. উভয় রোগই জীবাণুর সংক্রমণে হয়ে থাকে।
৩. উভয় রোগ ছড়াতে মাধ্যমের প্রয়োজন হয়।
বৈসাদৃশ্য:
১. পানিবাহিত রোগ পানির মাধ্যমে ছড়ায়, অপরদিকে বায়ুবাহিত রোগ বায়ুর মাধ্যমে ছড়ায়।
২. পানিবাহিত রোগের জীবাণু পানিতে মল-মূত্র ত্যাগ বা আবর্জনা ফেলার মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। অন্যদিকে বায়ুবাহিত রোগের জীবাণু হাঁচি-কাশি বা কথাবার্তা বলার সময় বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে।
৩. পানিবাহিত রোগ হলো- ডায়রিয়া, কলেরা, আমাশয় ইত্যাদি। অন্যদিকে বায়ুবাহিত রোগের মধ্যে রয়েছে- সোয়াইন ফ্লু, গুটিবসন্ত, যক্ষ্মা ইত্যাদি।

 

৪) হাঁচি-কাশির সময় হাত দিয়ে মুখ ঢেকে বা রুমাল ব্যবহার করে আমরা সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ করতে পারি। এক্ষেত্রে হাতের তালু ব্যবহার করার চেয়ে হাতের উল্টো পিঠ বা কনুই এর ভাঁজ ব্যবহার করা ভালো কেন?
উত্তর: সংক্রামক রোগসমূহের মধ্যে বায়ুবাহিত রোগগুলোর জীবাণু হাঁচি-কাশি বা কথাবার্তা বলার সময় বাতাসে ছড়ায়। তাই হাঁচি-কাশির সময়, হাত দিয়ে মুখ ঢেকে বা রুমাল ব্যবহার করতে হবে। যাতে আমরা সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ করতে পারি। এ ক্ষেত্রে হাতের তালু ব্যবহার করার চেয়ে, হাতের উল্টো পিঠ বা কনুই এর ভাঁজ ব্যবহার করা ভালো। কেননা হাঁচি কাশির সময় হাতের তালু ব্যবহার করলে জীবাণু হাতের তালুতে লেগে যাবে। পরবর্তীতে ঐ হাত দিয়ে খাদ্যদ্রব্য বা নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র স্পর্শ করলে তাতেও জীবাণু লেগে যাবে। ফলে খুব সহজেই সেখান থেকে জীবাণু অন্য ব্যক্তির শরীরে সংক্রমিত হবে। আর হাতের উল্টো পিঠ বা কনুইয়ের ভাঁজ ব্যবহার করলে এভাবে রোগ সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকে না।


প্রিয় শিক্ষার্থী, তোমাদের ক্লাসের সকল বইয়ের সমাধান পেতে আমাদের অ্যাপটি👉 Install করো।


আরও পড়ুন: পঞ্চম শ্রেণীর বিজ্ঞান ৬ষ্ঠ অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর

আরও পড়ুন: ৫ম শ্রেণির বিজ্ঞান অধ্যায় ৮ মহাবিশ্ব প্রশ্ন উত্তর

Codehorse App

Check Also

৫ম শ্রেণি বিজ্ঞান প্রশ্ন উত্তর

পঞ্চম শ্রেণি জনসংখ্যা ও প্রাকৃতিক পরিবেশ প্রশ্নোত্তর

পঞ্চম শ্রেণি জনসংখ্যা ও প্রাকৃতিক পরিবেশ প্রশ্নোত্তর: বিশ্বের জনসংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। বাড়তি জনসংখ্যার জন্য খাদ্য, …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *