৫ম শ্রেণির বিজ্ঞান অধ্যায় ১২ জলবায়ু পরিবর্তন প্রশ্ন উত্তর: জলবায়ু হলো আবহাওয়ার দীর্ঘ সময়ের গড় অবস্থা। কোনো অঞ্চলের আবহাওয়া কখনো স্বাভাবিক থাকতে পারে আবার কখনো চরম অবস্থা দেখা দিতে পারে। আবহাওয়ার এই পরিবর্তন ঐ অঞ্চলের তাপমাত্রা, বৃষ্টিপাতের পরিমাণ, কালবৈশাখী বা ঘূর্ণিঝড়ের প্রবণতা দ্বারা নির্ণয় করা যায়। আবহাওয়ার এই ভিন্নতা একটি স্বাভাবিক ঘটনা। অপরদিকে, আবহাওয়ার উপাদানগুলোর উল্লেখযোগ্য স্থায়ী পরিবর্তন হলো জলবায়ু পরিবর্তন। কোনো স্থানের জলবায়ু হঠাৎ পরিবর্তন হয় না। তবে আমরা এখন জলবায়ু পরিবর্তন উপলব্ধি করতে পারি। চলো বিষয়টি যাচাই করা যাক।
১. বৈশ্বিক উষ্ণায়ন:
পৃথিবীর সকল স্থানের তাপমাত্রা নির্ণয় করে গড় করার মাধ্যমে আমরা পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা নির্ণয় করতে পারি।
প্রশ্ন: পৃথিবীর গড় তাপমাত্রার কি কোনো পরিবর্তন হচ্ছে?
কাজ: পৃথিবীর গড় তাপমাত্রার পরিবর্তন
কী করতে হবে:
১. সহপাঠীদের নিয়ে ছোট ছোট দল তৈরি করি।
২. পৃথিবীর গড় তাপমাত্রার লেখচিত্রটি লক্ষ করি এবং বিভিন্ন বছরের গড় তাপমাত্রা খাতায় লিখি।
৩. সহপাঠীদের সাথে আলোচনা করে কাজটি সম্পন্ন করি।
লেখচিত্রটিতে দেখা গেল, পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা প্রতি বছর উঠানামা করছে। তবে বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে দেখেছেন যে, পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা ধীরে ধীরে বাড়ছে। পৃথিবীর তাপমাত্রা এভাবে বেড়ে যাওয়াকে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বলে। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে আবহাওয়ার বিভিন্ন উপাদানের পরিবর্তন ঘটছে। যেমন- বৃষ্টিপাতের ধরন বদলে যাচ্ছে। বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে পৃথিবীর জলবায়ুও ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হচ্ছে।
নিচের লেখচিত্রে দেখা যাচ্ছে যে, ঢাকার গড় তাপমাত্রা ক্রমশ বাড়ছে। তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার ফলে প্রাকৃতিক পরিবেশের ব্যাপক পরিবর্তন ঘটছে।
২. গ্রিন হাউজ প্রভাব:
প্রশ্ন: বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণ কী?
কাজ: গ্রিন হাউজ প্রভাব
কী করতে হবে:
১. দুইটি পেট্রি ডিশে তিনটি করে বরফ খণ্ড রাখি।
২. একটি পেট্রি ডিশ কাচের গ্লাস বা বিকার দিয়ে ঢেকে দেই।
৩. পেট্রি ডিশ দুইটিকে সূর্যের আলোতে রাখি। কোন ডিশটির বরফ আগে গলবে তা অনুমান করি।
৪. এবার ৩০ মিনিট অপেক্ষা করি।
৫. কোনটির বরফ আগে গলছে তা পর্যবেক্ষণ করি। অনুমানটি কি সঠিক হয়েছে?
দ্রষ্টব্য: কাজটি পেট্রি ডিশের পরিবর্তে কাচের গ্লাস এবং বিকারের পরিবর্তে স্বচ্ছ প্লাস্টিকের ব্যাগ ব্যবহার করেও করা যাবে।
দেখা গেলো যে, বিকার দিয়ে ঢেকে রাখা বরফখণ্ডগুলো খোলা বাতাসে রাখা বরফখণ্ডের তুলনায় আগে গলেছে। সূর্যের তাপ সহজেই বিকারের ভিতর প্রবেশ করতে পারে কিন্তু বিকার থেকে সহজে বের হতে পারে না। ফলে বিকারের ভিতর দ্রুত গরম হয়ে ওঠে। আর এটিই হলো গ্রিন হাউজ ধারণার মূল বিষয়। গ্রিন হাউজ হলো কাচের তৈরি ঘর যা ভেতরে সূর্যের তাপ আটকে রাখে। ফলে তীব্র শীতেও গাছপালা এই ঘরের ভিতর উষ্ণ ও সজীব থাকে।
গ্রিন হাউজ প্রভাব ও গ্রিন হাউজ গ্যাস-
পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলও গ্রিন হাউজের ন্যায় কাজ করে। বায়ুমণ্ডল হলো পৃথিবীকে ঘিরে থাকা বায়ুর স্তর। বায়ুমণ্ডলের জলীয় বাষ্প ও কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্যাস গ্রিন হাউজের কাচের দেয়ালের মতো কাজ করে। দিনের বেলায় সূর্যের আলো বায়ুমণ্ডলের ভেতর দিয়ে ভূপৃষ্ঠে এসে পড়ে এবং ভূপৃষ্ঠ উত্তপ্ত হয়। রাতে ভূপৃষ্ঠ থেকে সেই তাপ বায়ুমণ্ডলে ফিরে আসে এবং ভূপৃষ্ঠ শীতল হয়। কিন্তু কিছু তাপ বায়ুমণ্ডলের ঐ গ্যাসগুলোর কারণে আটকা পড়ে। ফলে রাতের বেলায়ও পৃথিবী উষ্ণ থাকে। আর তাপ ধরে রাখার এই ঘটনাকেই গ্রিন হাউজ প্রভাব বলে। তাপ ধরে রাখার জন্য দায়ী এসকল গ্যাসই হলো গ্রিন হাউজ গ্যাস।
মানুষের কর্মকান্ড ও বৈশ্বিক উষ্ণায়ন-
বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, কলকারখানা ও যানবাহনে কয়লা, তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস ইত্যাদি জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো হয়। এই জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর ফলে বায়ুমণ্ডলে অনেক পরিমাণ কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্যাস নির্গত হয়। পাশাপাশি বনভূমি ধ্বংসের ফলে গাছপালার মাধ্যমে কার্বন ডাইঅক্সাইড শোষণের হার কমছে। ফলে বাতাসে কার্বন ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ বাড়ছে। বেশি পরিমাণ কার্বন ডাইঅক্সাইড বেশি করে তাপ ধরে রাখছে। ফলে দিন দিন পৃথিবীর তাপমাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়াই হলো বৈশ্বিক উষ্ণায়ন।
বাস্তব ঘটনা থেকে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন পর্যবেক্ষণ-
তাপমাত্রা পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি আমরা হিমালয় পর্বতমালার হিমবাহ গলনের হার থেকেও বৈশ্বিক উষ্ণায়নের বিষয়টি নিশ্চিত হতে পারি। এছাড়া বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাবে মেরু অঞ্চলের বরফ গলছে এবং সমুদ্রের পানির উষ্ণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ফলে সমুদ্রের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
৫ম শ্রেণির বিজ্ঞান অধ্যায় ১২ জলবায়ু পরিবর্তন প্রশ্ন উত্তর:
১. সঠিক উত্তরে টিক চিহ্ন (✔) দিই।
১) নিচের কোনটি গ্রিন হাউজ গ্যাস?
ক. নাইট্রোজেন
খ. অক্সিজেন
গ. কার্বন ডাইঅক্সাইড✔
ঘ. হাইড্রোজেন
২) জলবায়ু কীভাবে পরিবর্তিত হয়?
ক. হঠাৎ
খ. দ্রুত
গ. মাঝে মাঝে
ঘ. ধীরে ধীরে✔
৩) কোনটি জলবায়ুর পরিবর্তন হ্রাস করে?
ক. কয়লা ও তেলের ব্যবহার
খ. সৌর শক্তির ব্যবহার✔
গ. বনভূমি ধ্বংস
ঘ. প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবহার
৪) নিচের কোনটি বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়?
ক. ঘূর্ণিঝড়
খ. হারিকেন✔
গ. কালবৈশাখী
ঘ. বন্যা
২. সংক্ষিপ্ত উত্তর প্রশ্নোত্তর:
প্রশ্ন ১। বৈশ্বিক উষ্ণায়ন কী?
উত্তর : পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়াই হলো বৈশ্বিক উষ্ণায়ন।
প্রশ্ন ২। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রধান কারণ কী?
উত্তর: বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রধান কারণ হলো বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্যাসের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়া বা গ্রিন হাউজ প্রভাব।
প্রশ্ন ৩। বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের একটি উদাহরণ দাও।
উত্তর : বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের ১টি উদাহরণ হলো-উত্তরাঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমে খরা দেখা দিচ্ছে।
প্রশ্ন ৪। পরিবেশের উপর বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাব কী?
উত্তর : পরিবেশের উপর বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাব হলো- ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, বন্যা, খরা, টর্নেডো, নদীভাঙন প্রভৃতি প্রাকৃতিক দুর্যোগ।
গাইড ও সাজেশন পেতে আমাদের অ্যাপটি ইন্সটল করো 👉 Install Now |
৩. বর্ণনামূলক প্রশ্ন :
১) গ্রিন হাউজের ভিতরের পরিবেশ গরম থাকে কেন? ব্যাখা করি।
উত্তর: গ্রিন হাউজ হলো কাচের তৈরি ঘর। এ ঘরের ভিতরের পরিবেশ গরম থাকে। কারণ কাচ তাপ কুপরিবাহী। কাচের ভিতর দিয়ে তাপ সহজে চলাচল করতে পারে না। কিন্তু সূর্যের আলো খুব সহজেই চলাচল করতে পারে। ফলে গ্রিন হাউজের ভিতরে সূর্যের তাপ আটকা পড়ে। এ তাপ বাইরে আসতে পারে না। আবার বাইরের ঠাণ্ডা আবহাওয়াও গ্রিন হাউজের ভিতর প্রবেশ করতে পারে না। যার ফলে গ্রিন হাউজের ভিতরের পরিবেশ গরম থাকে।
২) জলবায়ু পরিবর্তনের হার কমানো এবং এর সাথে খাপ খাওয়ানো কীভাবে সম্পর্কিত?
উত্তর: জলবায়ু পরিবর্তনের হার কমানো ও জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে খাপ খাওয়ানো বিষয় দুটি পরস্পরের সাথে সম্পর্কিত। এ দুটি বিষয়ই জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল। বিজ্ঞানীদের ধারণা অনুযায়ী জলবায়ুর পরিবর্তন বিভিন্ন প্রাকৃতিক সমস্যা ও দুর্যোগকে ভয়াবহ করে তুলবে। তাই জলবায়ু পরিবর্তনের কারণসমূহকে কমিয়ে, যেমন- বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাইঅক্সাইডের নির্গমনের পরিমাণ কমিয়ে আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের হার কমাতে পারি। আর এই পরিবর্তিত জলবায়ুতে আমরা নিজেদেরকে খাপ খাওয়ানোর মাধ্যমে এর ক্ষতিকর প্রভাবকে মোকাবিলা করতে পারি।
৩) কীভাবে আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের হার কমাতে পারি?
উত্তর: জলবায়ু পরিবর্তনের প্রধান কারণ হচ্ছে বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধি। তাই বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাইঅক্সাইডের বৃদ্ধির পরিমাণ কমানোর মাধ্যমেই জলবায়ু পরিবর্তনের হার কমানো সম্ভব। এছাড়াও জলবায়ু পরিবর্তনের হার
কমাতে নিচের পদক্ষেপগুলো নিতে হবে-
১. কয়লা, তেল, প্রাকৃতিক গ্যাসের মতো জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমাতে হবে।
২. নবায়নযোগ্য শক্তি যেমন- সৌর শক্তি, বায়ু শক্তি ইত্যাদির ব্যবহার বাড়াতে হবে।
৩. অধিক পরিমাণে বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাইঅক্সাইডের বৃদ্ধির হার কমাতে হবে।
৪. দৈনন্দিন জীবনে শক্তির ব্যবহার কমিয়েও কার্বন ডাইঅক্সাইডের নির্গমন কমানো যায়।
৪) পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল গ্রিন হাউজের কাচের মতো কাজ করে কেন?
উত্তর : পৃথিবীর চারিদিকে ঘিরে আছে বায়ুমণ্ডল। এই বায়ুমণ্ডলে রয়েছে কার্বন ডাইঅক্সাইড, মিথেন, জলীয়বাষ্পসহ বিভিন্ন গ্যাস। এই গ্যাসগুলো মিলে একটি স্তর সৃষ্টি করে, যা গ্রিন হাউজে থাকা কাচের দেয়ালের মতো কাজ করে। কারণ সূর্যের আলো এসব গ্যাসের স্তরকে ভেদ করে পৃথিবীকে উষ্ণ করে। কিন্তু উত্তপ্ত পৃথিবী থেকে তাপ বিকিরিত হয়ে চলে যাবার সময় এ গ্যাসগুলো বাধা দেয়। ফলে পৃথিবী রাতের বেলাতেও গরম থাকে। এভাবেই পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল গ্রিন হাউজের কাচের মতো কাজ করে।
৫) জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে খাপ খাওয়ানো বা অভিযোজন কী ব্যাখ্যা করি।
উত্তর: পরিবর্তিত জলবায়ুতে বেঁচে থাকার জন্য গৃহীত কর্মসূচিই হলো জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে খাপ খাওয়ানো বা অভিযোজন। অভিযোজনের উদ্দেশ্য হলো জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট ঝুঁকি কমানো ও পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে টিকে থাকার জন্য যথাযথ
ব্যবস্থা গ্রহণ। যেমন-
১. ঘরবাড়ি, বিদ্যালয়, কলকারখানা ইত্যাদি অবকাঠামোর উন্নয়ন করে।
২. বন্যা ও ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করে।
৩. উপকূলীয় বন সৃষ্টি করে।
৪. লবণাক্ত পরিবেশে বাঁচতে পারে এমন ফসল উদ্ভাবন করে।
৫. জীবনযাপনের ধরন পরিবর্তন করে।
৬. জলবায়ু পরিবর্তনের কারণ সম্পর্কিত ধারণা সকলকে জানিয়ে।
৬) পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বাড়তে থাকলে আমাদের জীবনে এর কী প্রভাব পড়বে?
উত্তর: পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বাড়তে থাকলে আমাদের জীবনে নিম্নরূপ প্রভাব পড়বে-
১. মেরু অঞ্চলের বরফ গলে সমুদ্রের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাবে।
২. বিভিন্ন প্রাকৃতিক সমস্যা ভয়াবহ আকারে দেখা দিবে।
৩. জলবায়ু পরিবর্তন ঘটে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি করবে।
৪. ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের হার ও মাত্রা বৃদ্ধি পাবে।
৫. হঠাৎ ভারী বৃষ্টিপাত ও আকস্মিক বন্যা দেখা দিবে।
৬. বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমে খরা দেখা দিবে।
৭. সমুদ্র থেকে নদীর পানিতে লবণাক্ত পানি প্রবেশ করবে।