আমাদের সংস্কৃতি তৃতীয় শ্রেণীর বিশ্বপরিচয়: আমাদের মাতৃভাষা বাংলা। আমরা এ ভাষাতেই পড়ি, লিখি এবং কথা বলে মনের ভাব প্রকাশ করি। বাংলাদেশের মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বললেও এ ভাষার রয়েছে বিভিন্ন আঞ্চলিক রূপ। এছাড়াও বাংলা ভাষার পাশাপাশি এদেশে বসবাসকারী অন্যান্য নৃ-গোষ্ঠীরও নিজস্ব ভাষা রয়েছে। বিশ্বের মাতৃভাষায় কথা বলা জনসংখ্যার মধ্যে বাংলা ভাষা পঞ্চম। ভাষা আমাদের সংস্কৃতির অন্যতম উপাদান।
বাংলাদেশের সংস্কৃতির আরও একটি উল্লেখযোগ্য উপাদান হলো খাদ্য। দৈনন্দিন জীবনে আমরা ভাত, মাছ, মাংস, ভর্তা, সবজি, ডাল ইত্যাদি খাবার খেয়ে থাকি। এছাড়া বিভিন্ন উৎসব ও অনুষ্ঠানে পোলাও, কোর্মা, বিরিয়ানি, রোস্ট এবং বিভিন্ন ধরনের মাংস ও মাছের পদ পরিবেশন করা হয়। এছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন ধরনের মিষ্টি জাতীয় খাবার, যেমন- ফিরনি, সেমাই, দই, মিষ্টি ও নানা রকমের পিঠা। আমাদের দেশের উল্লেখযোগ্য পিঠাগুলো হচ্ছে চিতই পিঠা, ভাপা পিঠা, দুধ চিতই, পুলি পিঠা, পাটিসাপটা, পাকন পিঠা, পানতোয়া, মালপোয়া, কুলশি, কাটা পিঠা, কলা পিঠা, নারকেল পিঠা, নারকেলের ভাজা পুলি, তেলের পিঠা, সেমাই পিঠা প্রভৃতি। বাংলাদেশের অন্যান্য নৃ-গোষ্ঠীর কিছু ঐতিহ্যগত খাবারও রয়েছে, যেমন- নাপ্পি, লাসৌ, থাংরো, শিংজু ইত্যাদি।
বাংলাদেশের মানুষ নানা রকমের পোশাক পরে। পুরুষদের পোশাকগুলোর মধ্যে লুঙ্গি, গেঞ্জি, ফতুয়া, পাজামা, পাঞ্জাবি, ধুতি অন্যতম। এছাড়া উল্লেখযোগ্য পোশাকগুলো হলো শার্ট, প্যান্ট, স্যুট, সোয়েটার, জ্যাকেট ইত্যাদি। নারীদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক হচ্ছে শাড়ি। তাছাড়া অনেকে সালোয়ার, কামিজ, ফ্রক, স্কার্ট, বোরকা, হিজাব ইত্যাদি পোশাক পরেন। শিশুদের মধ্যে ছেলেরা সাধারণত গেঞ্জি, হাফপ্যান্ট, শার্ট, পায়জামা, পাঞ্জাবি, জ্যাকেট ইত্যাদি পোশাক পরে; আর মেয়েরা ফ্রক, সালোয়ার, কামিজ, স্কার্ট, কার্ডিগান ইত্যাদি পোশাক পরে। বাংলাদেশের অন্যান্য নৃ-গোষ্ঠীর জনগণ কিছু ঐতিহ্যগত পোশাকও পরিধান করেন, যেমন- পিনন, হাদি, থামি, আঙ্গি, দকবান্দা, দকসারি ইত্যাদি। বাংলাদেশের সকল জনগোষ্ঠীর ভাষা, খাবার ও পোশাকের বৈচিত্র্য এদেশের সাংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করেছে।
আমাদের সংস্কৃতি তৃতীয় শ্রেণীর বিশ্বপরিচয়:
অধ্যায় ৫ : আমাদের সংস্কৃতি
ক. সঠিক উত্তরের পাশে টিক (√) চিহ্ন দিই।
১. জনসংখ্যার ভিত্তিতে বাংলা ভাষার স্থান কততম?
ক. ৩য়
খ. ৪র্থ
গ. ৫ম√
ঘ. ৬ষ্ঠ
২. নারীদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক কোনটি?
ক. শাড়ি√
খ. কামিজ
গ. স্কার্ট
ঘ. সালোয়ার
খ. বাম পাশের সাথে ডান পাশের মিল করি
বাম পাশ | ডান পাশ |
বাংলা | ছেলেদের পোশাক |
পানতোয়া | ভাষা |
কামিজ | ধর্মীয় অনুষ্ঠান |
ঈদুল ফিতর | খাবার |
লুঙ্গি | মেয়েদের পোশাক |
উত্তর:
ক. বাংলা ভাষা।
খ. পানতোয়া খাবার।
গ. কামিজ মেয়েদের পোশাক।
ঘ. ঈদুল ফিতর ধর্মীয় অনুষ্ঠান।
ঙ. লুঙ্গি ছেলেদের পোশাক।
গ. সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১. সাংস্কৃতিক উপাদানগুলো কী কী?
উত্তর : সাংস্কৃতিক উপাদানগুলো হলো- ভাষা, খাবার, পোশাক, প্রথা, আচার, বিশ্বাস, নৃত্য, সংগীত, উৎসব ইত্যাদি।
২. বিভিন্ন নৃ-গোষ্ঠীর কয়েকটি পোশাকের নাম লিখি।
উত্তর: বিভিন্ন নৃ-গোষ্ঠীর কয়েকটি পোশাকের নাম হলো- পিনন, হাদি, থামি, আঙ্গি, দকবান্দা, দকসারি ইত্যাদি।
ঘ. বর্ণনামূলক প্রশ্ন
১. আমাদের দেশে প্রচলিত সংগীত, নৃত্য ও উৎসবের একটি তালিকা তৈরি করি।
উত্তর: আমাদের দেশে প্রচলিত সংগীত, নৃত্য ও উৎসবের তালিকা-
সংগীত
১. বাউল, ২. জারী, ৩. সারি, ৪. ভাটিয়ালি, ৫. পল্লীগীতি, ৬. ভাওয়াইয়া, ৭. নজরুলগীতি, ৮. রবীন্দ্র সংগীত ইত্যাদি।
নৃত্য
১. লোক নৃত্য, ২. সৃজনশীল নৃত্য, ৩. শাস্ত্রীয় নৃত্য, ৪. বিভিন্ন নৃ-গোষ্ঠীর নিজস্ব নৃত্য ইত্যাদি।
উৎসব
১. বাংলা নববর্ষ, ২. নবান্ন উৎসব, ৩. ঈদ-উল-ফিতর, ৪. ঈদ-উল-আযহা, ৫. দুর্গা পূজা, ৬. কালী পূজা, ৭. বুদ্ধ পূর্ণিমা, ৮. বড়দিন ইত্যাদি।
২. আমি অংশগ্রহণ করেছি এমন একটি উৎসবের বর্ণনা লিখি।
উত্তর: আমি অংশগ্রহণ করেছি এমন একটি উৎসব হলো বাংলা নববর্ষ। বাংলা নববর্ষ বাংলাদেশের প্রধান সামাজিক উৎসব। বাংলা বছরের প্রথম দিন অর্থাৎ পহেলা বৈশাখে এ, উৎসবটি পালিত হয়। অন্যান্য নৃ-গোষ্ঠী বিজু, সাংগ্রাই ইত্যাদি নামে পহেলা বৈশাখ পালন করে। জাতি-ধর্ম- বর্ণ নির্বিশেষে সবাই মিলে এ দিনটি উদ্যাপন করা হয়। এ উপলক্ষে বিভিন্ন গান-বাজনা ও বৈশাখী মেলার আয়োজন করা হয়। বৈশাখী মেলায় বিভিন্ন রকমের মিষ্টি, মাটির খেলনা, হাঁড়ি, পুতুল ইত্যাদি পাওয়া যায়।